https://www.cpmrevenuegate.com/nr3xdp9ke?key=9460e86c82837f1aca3dab5b317cb586


ক্যান্সার কি

ক্যান্সার হলো একটি রোগ।যেখানে শরীরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয়।এই অস্বাভাবিক কোষগুলো একত্রিত হয়ে টিউমার তৈরি করতে পারে, যা নরম টিস্যু এবং অঙ্গের ক্ষতি করে তৈরি হয় ক্যান্সার। 

ক্যান্সার কীভাবে হয়

মানবদেহে ক্যান্সার সাধারণত কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে:

জেনেটিক মিউটেশন:

অনেক সময় কিছু মানুষের DNA তে স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, যা ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।

পরিবেশগত কারণ: 

ধূমপান, বিষাক্ত রাসায়নিক, রেডিয়েশন ইত্যাদি পরিবেশগত উপাদান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর: 

অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, শারীরিক অক্রিয়তা, ওজন বাড়া, এবং অ্যালকোহল সেবন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ভাইরাল সংক্রমণ: 

কিছু ভাইরাস যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) এবং হেপাটাইটিস বি ও সি ক্যান্সার ঘটাতে পারে।

হরমোনাল পরিবর্তন: 

কিছু ক্যান্সার যেমন স্তন ক্যান্সার হরমোনের তারতম্যের প্রভাবে হতে পারে।

এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টির প্রক্রিয়া, তবে প্রতিটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কারণগুলো ভিন্ন হতে পারে।

ক্যান্সার এর লক্ষণ

ক্যান্সারের লক্ষণগুলো রোগের প্রকারভেদ এবং অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

1. অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমা।

2. জ্বর: দীর্ঘমেয়াদি জ্বর বা বারবার জ্বর হওয়া।

3. ক্লান্তি: অবিরাম ক্লান্তি অনুভব করা।

4. শারীরিক পরিবর্তন : মল, প্রস্রাব বা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন।

5. গায়ে গিঁট বা টিউমার : শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক গিঁট বা টিউমার অনুভব করা।

6. যন্ত্রণা: শরীরের কোনো স্থানে অবিরাম যন্ত্রণা।

7. বদলে যাওয়া ত্বক : ত্বকের রং, আকার বা গঠন পরিবর্তন।

8. শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।

9. মৌখিক পরিবর্তন : দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষত, ঘা বা গলা খসখসে অনুভূতি।

যদি উপরের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

ক্যান্সার কী ছোঁয়াচে রোগ

না, ক্যান্সার ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি এক ধরনের অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধির কারণে হয়, যা শরীরের নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয় এবং টিউমার গঠন করে। ক্যান্সার একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সরাসরি ছড়ায় না, যেমন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে ছোঁয়াচে রোগ হয়। তবে, কিছু ভাইরাস (যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস বা হেপাটাইটিস বি/সি) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, কিন্তু সে ভাইরাসগুলিও সরাসরি ক্যান্সার ছড়ায় না।

ক্যান্সার হলে মানুষ কতদিন বাঁচে

ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর জীবনকাল নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন, পর্যায়, চিকিৎসার গতি, রোগীর শারীরিক অবস্থা, এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর। কিছু ক্ষেত্রে, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগী দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ থাকতে পারেন।পুরোপুরি সুস্থও হয়ে যেতে পারেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে, ক্যান্সার অনেকটাই উন্নত পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সত্ত্বেও জীবনকাল কমে যেতে পারে।

অনেক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার (5-year survival rate) একটি প্রচলিত মাপকাঠি, তবে এটি সবার ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। চিকিৎসা ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনেক রোগীই ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে বেঁচে থাকেন এবং তাদের জীবন মান উন্নত হয়।

ক্যান্সার কী ভাল হয়

কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। যেমন, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, এবং ত্বকের ক্যান্সারসহ বেশ কয়েকটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, যদি এটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে এবং যথাযথ চিকিৎসা (সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, ইমিউনোথেরাপি ইত্যাদি) করা হয়, তবে ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে, কিছু ধরনের ক্যান্সার যেমন লাং ক্যান্সার বা প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার প্রায়ই উন্নত পর্যায়ে ধরা পড়ে, যার ফলে সেগুলির চিকিৎসা জটিল হতে পারে এবং পুরোপুরি সেরে ওঠার সম্ভাবনা কমে যায়। 

তবে, চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক সময় ক্যান্সারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং রোগীকে দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ রাখা যায়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক উন্নতি হয়েছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারকে "ক্রনিক" বা নিয়ন্ত্রণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা

ক্যান্সার রোগীর জন্য খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক পুষ্টি শরীরকে শক্তি দেয়, ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে এবং চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়ক হয়। নিচে ক্যান্সার রোগীর জন্য কিছু খাবার তালিকা দেওয়া হলো, যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হবে:

 ১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

চিকেন, মাংস, মাছ (গ্রিলড বা বেকড)

ডিম

ডাল, মটরশুটি, ছোলা

বাদাম ও বাদামের মাখন

দই ও দুধজাত খাবার (কম চর্বিযুক্ত হলে ভালো)

২. ফল ও সবজি

সবুজ শাক-সবজি (যেমন পালং শাক, ব্রকোলি)

গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো

 ফল (যেমন বেরি, আপেল, আঙ্গুর, কমলালেবু, পেয়ারা)

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (লেবু, স্ট্রবেরি)

৩. শর্করা ও ফাইবার

লাল চাল, বাদামী চাল, ওটস

পুরো গমের রুটি, পাস্তা

শিম ও অন্যান্য ফাইবারযুক্ত শস্যদানা

মিষ্টি আলু ও কুমড়া

৪. চর্বি

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন সামুদ্রিক মাছ: সালমন, ম্যাকেরেল)

অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল

অ্যাভোকাডো

৫. প্রচুর পানি ও তরল

শুদ্ধ পানি

তাজা ফলের রস (মিষ্টি ছাড়া)

সবজি স্যুপ বা ব্রথ

গ্রীন টি

৬. এড়ানো উচিত

প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সসেজ, সালামি)

অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার

অতিরিক্ত চর্বি বা ভাজা খাবার

অ্যালকোহল ও ধূমপান

কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড পানীয়

বিশেষ পরামর্শ

- ক্যান্সারের ধরণ ও চিকিৎসা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে খাদ্যতালিকা ভিন্ন হতে পারে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে খাদ্যের প্রতি রুচি কমে যেতে পারে বা মুখে আলসার হতে পারে, সেক্ষেত্রে নরম ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নেওয়া উচিত।

- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েটিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উচিত, যেন রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সঠিক খাবার নির্ধারণ করা যায়।

ব্লাড ক্যান্সারের (লিউকেমিয়া) সাধারণ লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:

1. **দুর্বলতা ও ক্লান্তি**: রক্তের স্বাভাবিক কোষের অভাবের কারণে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যা অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণ হতে পারে।

2. **জ্বর বা ইনফেকশন**: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ঘন ঘন জ্বর বা ইনফেকশন হতে পারে।

3. **অত্যধিক বা সহজে রক্তপাত**: নাক থেকে রক্তপাত, মাড়ি থেকে রক্তপাত বা ক্ষুদ্র আঘাতে দীর্ঘক্ষণ রক্তপাত হতে পারে।

4. **ত্বকে র‍্যাশ বা নীলচে দাগ**: ছোট ছোট লাল বা বেগুনি দাগ ত্বকে দেখা যেতে পারে।

5. **হাড় বা জয়েন্টে ব্যথা**: রক্ত কোষ উৎপাদনের স্থান হাড়ের ম্যারোতে চাপ অনুভব করা যায়, যার ফলে ব্যথা হতে পারে।

6. **শ্বাসকষ্ট**: অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।

7. **ওজন কমে যাওয়া**: কোন কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমতে পারে।

8. **পেটের ফোলাভাব**: প্লীহা (spleen) বা যকৃতের (liver) আকার বড় হয়ে গেলে পেট ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।

উপরোক্ত লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ

কোলন ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:

1. **মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন**: দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগের সময়ের ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন হতে পারে।

2. **মলের রঙ পরিবর্তন বা রক্ত**: মলে লাল বা গাঢ় রঙের রক্ত থাকতে পারে।

3. **পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি**: পেটে ক্র্যাম্প, গ্যাস বা ব্যথা অনুভব হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

4. **ওজন হ্রাস**: কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।

5. **দুর্বলতা ও ক্লান্তি**: শরীরে রক্তাল্পতা বা অন্যান্য জটিলতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।

6. **অপূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি**: মলত্যাগের পরেও পেট পুরোপুরি খালি না হওয়ার অনুভূতি হতে পারে।

7. **বমি বমি ভাব বা বমি**: হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার কারণে বমি হতে পারে।

এই লক্ষণগুলো কোলন ক্যান্সারের পাশাপাশি অন্যান্য হজমজনিত সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে, তাই কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ

স্তন ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

1. **স্তনে বা বগলে গিঁট বা চাকা**: স্তন বা বগলের মধ্যে কোনো গিঁট বা চাকা অনুভব করলে, এটি ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।

2. **স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন**: স্তনের আকার বা আকৃতিতে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

3. **স্তনের ত্বকের পরিবর্তন**: ত্বক লালচে হওয়া, ফুলে যাওয়া, বা কমলার খোসার মতো হয়ে যাওয়া।

4. **নিপল (বোঁটা) থেকে তরল বের হওয়া**: নিপল থেকে রক্তমিশ্রিত বা স্বচ্ছ তরল বের হলে তা সতর্ক সংকেত হতে পারে।

5. **নিপলের অবস্থানে পরিবর্তন**: নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া বা তার আকার পরিবর্তিত হওয়া।

6. **স্তনে বা নিপলে ব্যথা**: যদি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থাকে।

7. **স্তনের ত্বক মোটা হয়ে যাওয়া বা শক্ত হওয়া**: স্তনের ত্বক মোটা বা শক্ত হয়ে যেতে পারে।

এই লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ।

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট নাও হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

1. **ওজন কমে যাওয়া**: কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।

2. **ক্ষুধামন্দা**: স্বাভাবিকের চেয়ে কম খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে।

3. **পেটে ব্যথা বা ফোলাভাব**: পেটের ডানদিকে বা মাঝখানে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে, পাশাপাশি পেট ফোলা বা ভারী মনে হতে পারে।

4. **বমি বমি ভাব বা বমি**: হজমের সমস্যার কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে।

5. **জন্ডিস (জাউndice)**: চোখের সাদা অংশ বা ত্বক হলুদ হয়ে যেতে পারে।

6. **গাঢ় প্রস্রাব এবং ফ্যাকাশে মল**: মলের রঙ ফ্যাকাশে বা প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হতে পারে।

7. **দুর্বলতা ও ক্লান্তি**: শরীর দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ হতে পারে, বিশেষত যদি লিভার ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

8. **প্লীহা বা যকৃতে ফোলাভাব**: যকৃত বা প্লীহার আকার বড় হয়ে গেলে পেটের উপরের ডান দিকে ফোলা অনুভব হতে পারে।

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লিভার ক্যান্সার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ

জরায়ু (ইউটেরাস) ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

1. **অস্বাভাবিক রক্তপাত**: মাসিকের সময়ের বাইরে বা মেনোপজের পর রক্তপাত হলে এটি জরায়ু ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।

2. **মাসিকের অস্বাভাবিকতা**: মাসিকের সময় অত্যধিক রক্তপাত বা দীর্ঘস্থায়ী মাসিক হতে পারে।

3. **পেলভিসে ব্যথা**: পেটে বা পেলভিস অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।

4. **মল বা প্রস্রাবে কষ্ট**: প্রস্রাব বা মলত্যাগে কষ্ট বা ব্যথা হতে পারে।

5. **ওজন কমে যাওয়া**: কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।

6. **ক্লান্তি**: শরীর দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ হতে পারে।

7. **অসাধারণ স্রাব**: সাদা বা রক্তমিশ্রিত স্রাব জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

8. **সেক্সের সময় ব্যথা**: যৌন মিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হলে সেটিও একটি লক্ষণ হতে পারে।

এই লক্ষণগুলোর যে কোনো একটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর আগে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যদিও এগুলো রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। এই লক্ষণগুলো ক্যান্সারের চূড়ান্ত পর্যায়ে দেখা দিতে পারে, যখন দেহ আর রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

1. **ক্লান্তি এবং দুর্বলতা**: রোগী অত্যন্ত দুর্বল বোধ করে এবং শারীরিক শক্তি কমে যায়। তারা বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে পারে।

2. **শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা**: শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, শ্বাসপ্রশ্বাসের ধরণ পরিবর্তন হতে পারে, যেমন দ্রুত শ্বাস নেওয়া বা থেমে থেমে শ্বাস নেওয়া।

3. **ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া**: রোগী অনেক কম খেতে শুরু করে, এবং দ্রুত ওজন কমে যেতে পারে।

4. **মনের অস্পষ্টতা বা বিভ্রান্তি**: রোগী কখনও কখনও মনের অস্পষ্টতা, বিভ্রান্তি, বা চিন্তাভাবনায় সমস্যা অনুভব করতে পারে। 

5. **পালস এবং রক্তচাপের পরিবর্তন**: পালস ধীর বা অনিয়মিত হতে পারে এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

6. **মূত্র নিঃসরণ কমে যাওয়া**: কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় মূত্রের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

7. **ত্বকের শীতলতা এবং বিবর্ণতা**: হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে এবং ত্বক ফ্যাকাশে বা নীলচে হতে পারে, বিশেষত পায়ের আঙুল বা হাতের আঙুলে।

8. **চেতনার পরিবর্তন**: রোগী মাঝে মাঝে অচেতন হতে পারে বা গভীর নিদ্রায় যেতে পারে, এবং তারা চারপাশের সঙ্গে কম যোগাযোগ রাখে।

এই লক্ষণগুলো যদি দেখা দেয়, তবে রোগীকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া এবং তার প্রয়োজন অনুযায়ী যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার ও যত্ন প্রদানকারীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত এবং একজন চিকিৎসকের পরামর্শে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা হসপিস কেয়ার বিবেচনা করা যেতে পারে।

ক্যান্সারের চিকিৎসা বাংলাদেশে

বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে এবং ক্লিনিকে প্রদান করা হয়। এখানে কিছু প্রধান চিকিৎসার ধরন ও ব্যবস্থার বিবরণ দেওয়া হলো:

১. **চিকিৎসার ধরন**

- **সার্জারি (অপারেশন)**: ক্যান্সারের টিউমার এবং আক্রান্ত অংশ অপসারণের জন্য সার্জারি করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত হলে এটি সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে।

- **রেডিওথেরাপি**: এক্স-রে বা অন্যান্য উচ্চ শক্তির রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এটি সাধারণত অপারেশনের পরে বা কেমোথেরাপির সাথে ব্যবহৃত হয়।

- **কেমোথেরাপি**: কেমোথেরাপি রোগীকে কেমিক্যাল ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য দেওয়া হয়। এটি সাধারণত সিস্টেমিক থেরাপি হিসেবে কাজ করে এবং পুরো দেহে প্রভাব ফেলে।

- **টার্গেটেড থেরাপি**: এই চিকিৎসায় ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোষের উপর লক্ষ্য করে চিকিৎসা করা হয়। এটি ক্যান্সারের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

- **হরমোন থেরাপি**: কিছু ক্যান্সার, যেমন স্তন বা প্রস্টেট ক্যান্সার, হরমোনের উপর নির্ভরশীল হয়। এই চিকিৎসায় হরমোনের প্রভাব কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধ দেওয়া হয়।

 ২. **স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান**

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কিছু প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো:

- **বাংলাদেশ ক্যান্সার হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট** (BCMRI)

- **গবেষণা ও ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র** (National Institute of Cancer Research and Hospital)

- **সিটি হাসপাতাল**

- **ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল**

- **এ্যাপোলো হাসপাতাল** (ঢাকা)

৩. **বিমা ও সরকারি সহায়তা**

বাংলাদেশে কিছু স্বাস্থ্য বিমা প্রোগ্রাম এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও, নানান এনজিওও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাহায্যের প্রস্তাব করে।

 ৪. **প্যালিয়েটিভ কেয়ার**

অতিরিক্ত কঠিন অবস্থার সময়, প্যালিয়েটিভ কেয়ার ব্যবস্থা রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে। এটি বিশেষভাবে তীব্র ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

 ৫. **সচেতনতা এবং শিক্ষা**

বাংলাদেশে ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে, যেমন ক্যান্সার স্ক্রীনিং ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম।

বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রগতিশীল হচ্ছে, তবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা ও সহযোগিতার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন