গ্রীষ্মকালীন ফলগুলোর মধ্যে তরমুজ হলো অন্যতম।আমাদের দেশে তরমুজ একটি খুবই জনপ্রিয় ফল।প্রচন্ড গরমে তরমুজ খেতে সকলেই ভালোবাসে।
তরমুজ এমন একটি ফল যেটাতে ৯০ ভাগের বেশি পানি থাকে।তাই তরমুজ খেলে দ্রত পানির পিপাসা দূর হয়।তরমুজ একটি ফাইবার ও আঁশ জাতীয় খাবার।এছাড়াও তরমুজের রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
তরমুজের পুষ্টিগুণ
তরমুজে অল্প পরিমাণ ক্যালোরি বিদ্যমান থাকে।তাই নিয়মিত তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার কোনও আশংকা থাকে না।তরমুজ নিয়মিত খেলে বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি লাভ করা যায়।তরমুজের সকল পুষ্টি উপাদান গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
তরমুজে কি কি উপাদান আছে
- শর্করা
- প্রোটিন
- ক্যালসিয়াম
- লৌহ
- ম্যাগনেশিয়াম
- পটাশিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- সোডিয়াম
- ফসফরাস
- জিংক
- ফাইবার
- ভিটামিন 'সি'
- ভিটামিন 'বি'
- লাইকোপেন
- ভিটামিন 'এ'
- থায়ামিন
- ক্যারোটিন
- পানি
তরমুজের উপকারিতা
কিডনি সুস্থ রাখে
যাদের কিডনিতে এখন পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয় নাই তারা তরমুজ খেলে কিডনির ভালো উপকারীতা পাবে।পানি স্বল্পতার কারণে কিডনিতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।আর যেহেতু তরমুজে ৯০ ভাগ পানি বিদ্যমান থাকে সেহেতু খুব সহজে কিডনির পানির চাহিদা পূরণ করে।তরমুজ আমাদের শরীর হতে ক্ষতিকর নিউরো টক্সিন বাহিরে বের করে দেয়।এরফলে কিডনির উপর চাপ কম পড়ে।এতে কিডনি সুস্থ থাকে।
আর যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তরমুজ খাবেন।তার আগে খাবেন না।
যেসব খাবার আপনার কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা চোখের সমস্যায় ভুগে থাকে।অনেকে তো আবার রাতে ঠিকমতো দেখতে পারে না,যাকে বলে রাতকানা রোগ।
নিয়মিত তরমুজ খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে ও এসব রাতকানা রোগের সমস্যা দূর হবে।কারণ তরমুজে ক্যারোটিন ও ভিটামিন 'এ' বিদ্যমান।আর চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান হচ্ছে ভিটামিন 'এ' ও ক্যারোটিন।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
অনেকের মুখে মেছতা,ব্রণ হয়ে থাকে।এগুলো হওয়ার কারণে মুখের মধ্যে কালো দাগ পড়ে যায়।এছাড়া অনেক কারণে মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে।তরমুজ আপনার হারানো সৌন্দর্য ফিরে দিতে কাজ করবে।ভিটামিন 'এ' আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন দাগ দূর করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।আর তরমুজের মধ্যে ভিটামিন এ বিদ্যমান।তাই সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তরমুজ ভালো উপকারী হবে।
হাড়কে শক্তিশালী করে
আমাদের শরীরের যদি হাড় দূর্বল থাকে তাহলে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে ব্যাথা ও বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে।হাড়কে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে প্রয়োজন ক্যালসিয়ামের।আর তরমুজ হতে শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।প্রতিনিয়ত তরমুজ খেলে হাড়জনিত কোনও রোগ হওয়ার সম্ভবনা খুব কম থাকে।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের সঠিক তালিকা
হার্ট বা হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখে
আমাদের দেশের অনেক মানুষ হার্টের সমস্যায় ভূগে থাকে।শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্টের সমস্যা হয়।আর শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে ভিটামিন 'সি' ও পটাশিয়াম কাজ করে।
আর তরমুজে ভালো পরিমাণে ভিটামিন 'সি' ও পটাশিয়াম বিদ্যমান থাকে।তাই নিজের হার্টকে সুস্থ রাখতে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে।
হৃদ রোগীর জন্য খাবার তালিকা
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক রোগ।এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও লক্ষণ প্রকাশ করে না।কিন্তু ভিতর ভিতরে একজন মানুষকে শেষ করে দেয়।তাই এই রোগকে অনেকে নীরবঘাতক বলে থাকে।উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি,যকৃত,চোখ ও হৃৎপিন্ডের সমস্যা হয়ে থাকে।
রক্তে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ হতে মুক্তি লাভ করা যায়।তাই নিয়মিত এক গ্লাস তরমুজের জুজ খেলে রক্তে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
হাঁপানি রোগীকে সুস্থ রাখে
হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্টজনিত মারাত্মক রোগ।হাঁপানি অনেকের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলে।শ্বাসকষ্ট জনিত রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিটামিন 'সি' কার্যকরী ভুমিকা রাখে।তরমুজে থাকা ভিটামিন 'সি' আপনার শ্বাসকষ্ট রোধে কাজ করে।নিয়মিত তরমুজ খেলে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
অনেকে কোলন ক্যান্সার,প্রোস্টেট ক্যান্সার,ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগে থাকে।তরমুজ সরাসরি ক্যান্সার প্রতিষেধক না হলেও ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।তরমুজ কেউ নিয়মিত খেলে তার ক্যান্সার হওয়ার কোনও সম্ভবনা থাকে না।
তরমুজের অপকারিতা
১. তরমুজ একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল।তাই তরমুজ অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া সহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
২. তরমুজের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে লাইকোপেন।যা একটি রাসায়নিক পদার্থ।এই পদার্থ পেটের ভিতর অতিরিক্ত গেলে হজম শক্তি কমে যেতে পারে।
৩. তরমুজে শর্করা একটু বেশি থাকে।আর অতিরিক্ত তরমুজ খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।এতে ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীর ডায়াবেটিস আর ও বেড়ে যেতে পারে।
৪. তরমুজে পটাশিয়াম বিদ্যমান।এই পটাশিয়াম আমাদের শরীরের হাড় ও হার্টকে সুস্থ রাখতে কাজ করে।আর অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম শরীরে প্রবেশ করলে হৃৎরোগ হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।মানে অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।
কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভালো না।তাই তরমুজ ও খেতে হবে নিয়ম মাফিক।কেউ যদি কোনও রোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তারপর তরমুজ খেতে পারবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন