আম বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম।মিষ্টি ও টক সমৃদ্ধ ফলটিকে সকল ফলের 'রাজা' বলা হয়।আম বেশিরভাগ সময় গ্রীষ্মকালে জন্মে থাকে।
অনেক আমের জাত আছে যা বারোমাসে ফল দিয়ে থাকে।পৃথিবীর সকল উষ্ণ অঞ্চল গুলোতে ব্যাপক আমের চাষ হয়।আম কাঁচা অবস্থায় সবুজ রং ও পাকা অবস্থায় হলুদ রং ধারণ করে থাকে।
আম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।আম আমরা বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকি।কাঁচাতে,পাকলে,আমের আচার তৈরি করে,আমের ভর্তা করে ও আমের জুজ তৈরি করে।
সারা পৃথিবীতে আমের ৩৫ টির মতো প্রজাতি ও কয়েকশ জাত রয়েছে।এদের মধ্যে অনেক জাত রয়েছে যেগুলো ভালো পরিমাণ ফলন দিয়ে থাকে।
উচ্চ ফলনশীল আমের জাত
- হাড়িভাঙ্গা
- রানিভোগ
- রাজভোগ
- মোহনভোগ
- মল্লিকা
- কাকাতুয়া
- ফজলি
- সুরমাই ফজলি
- শীতল পাটি
- লক্ষণ ভোগ
- বোম্বাই
- ক্ষিরমণ
- গোপালভোগ
- ক্ষিরসাপাতি
- ল্যাংরা
- আশ্বিনা
- আম্রপালি
- গৌরমতি
- কাটিমন
- হিমসাগর
- সুন্দরী
- কালিগুলি
- বারি
- বালিশা
- ফুনিয়া
আমের পুষ্টি উপাদান
আম শুধু খেতেই সুস্বাদু না রয়েছে আমের প্রচুর পুষ্টি উপাদান।আম খাওয়ার মাধ্যমে শরীর সুস্থ থাকে।যেসব পুষ্টি উপাদান আমে বিদ্যমান তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- শর্করা
- শক্তি
- প্রোটিন
- কোলিন
- ভিটামিন বি
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন ই
- এন্টিঅক্সিডেন্ট
- ক্যালসিয়াম
- লৌহ
- ম্যাঙ্গানিজ
- ফসফরাস
- জিংক
- জৈব এসিড
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
আম খাওয়ার উপকারিতা
রক্তস্বল্পতা দূর করে
রক্তস্বল্পতা রোগীর জন্য আম খুবই উপকারী ফল।আমে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকে।এই পটাশিয়াম হার্টকে সবসময় সচল রাখে ও রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর করে।
রক্ত পরিষ্কার করে
আমাদের রক্তে ময়লা জমলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হয়।মুখে ব্রণ হয়,শরীরে চুলকানি হয়। এসব সমস্যা দূর করতে আম কার্যকরী ভুমিকা রাখে।আমে থাকা জৈব এসিড সাইট্রিক ও টারটারিক আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে থাকে।
হাড়কে শক্তিশালী করে
মানব দেহের হাড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।এই হাড়কে ক্ষয়রোধ থেকে দূরে রাখতে ও শক্তিশালি করতে প্রয়োজন ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের।যা কাঁচা আমে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন
ত্বক উজ্জ্বল করে
আমাদের মুখের মধ্যে ব্রণ বা অন্য কোনও কারণে মুখের বারো অবস্থা দেখা যায়।যা দেখতে অনেক খারাপ লাগে।পর্যাপ্ত পরিমাণ আম খাওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।পাকা আম আমাদের ত্বকের ভিতরের ও বাহিরের উভয় দিকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।ত্বককে মসৃণ করে তোলে।
চুলকে মজবুত রাখে
অনেকের চুল পড়া সমস্যা খুব হয়ে থাকে।অনেক চেষ্টার পরও এই সমস্যা দূর করতে পারে না।তারা আম খেয়ে এই সমস্যা দূর করতে পারে।কারণ আমে থাকা খনিজ লবণ আমাদের চুলকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
অনেকে রাতে কম দেখতে পারে।অনেকে দিনের আলোতে বেশি ভালো দেখতে পারে না।এই সমস্যা হওয়ার কারণ হচ্ছে শরীরে ভিটামিন 'এ' এর অভাব।আম খেলে এই সমস্যা সহজে দূর করা যায়।আমে থাকা ভিটামিন 'এ' আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ক্যান্সার একটি মারাত্মক প্রাণঘাতি রোগ।ক্যান্সারে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী মৃত্যু বরণ করে থাকে।এর থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে ক্যান্সার কোষ জন্মানোর সাথে সাথে তাকে ধ্বংস করতে হবে।ক্যান্সার কোষকে ধ্বংশ করতে প্রয়োজন এন্টিঅক্সিডেন্ট এর।আমে ভালো পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখে
কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে।কোলেস্টেরল এর মাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে হার্ট এ্যাটাক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।আমে থাকা ভিটামিন 'সি' ও ফাইবার শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ঠিক রাখে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে মুক্তির জন্য হজমশক্তি বৃদ্ধি করা দরকার হয়।আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে।এই ফাইবার আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
আম স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভালো কাজ করে থাকে।আমে থাকা গ্লুটামিক অ্যাসিড আমাদের মতিষ্ককের কোষকে উজ্জিবীত করে।এতে আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।তাই সকলের আম খাওয়া উচিত।
আম খাওয়ার অপকারিতা
আমের যেমন অনেক উপকারীতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত আম খেলে এর অপকারিতাও রয়েছে।নিচে কিছু আমের অপকারিতা দেওয়া হলোঃ
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে
এই ফলটিতে ভালো পরিমাণ চিনি থাকে।অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।যা চিনি থেকে গ্লুকোজ এ রূপান্তরিত হতে পারে।যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মারাত্মক হতে পারে।
এলার্জি সমস্যা হতে পারে
সবার ক্ষেত্রে আম খেলে এলার্জি সমস্যা না হলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে।আমে থাকা ল্যাটেক্স জাতীয় প্রোটিন এই এলার্জির সমস্যা করতে পারে।
ওজন বেড়ে যেতে পারে
আম অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।আমে ভালো পরিমাণ শর্করা ও ক্যালোরি বিদ্যমান থাকে।এগুলো শরীরে অতিরিক্ত প্রবেশ করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে
আমের এত উপকারিতা দেখে ভুলেও অতিরিক্ত আম খেতে যাবেন না।অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো না।অতিরিক্ত আম খেলে পেটের সমস্যা হয়ে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হতে পারে।
আম খাওয়ার সঠিক সময়
আম সঠিক সময় ও নিদিষ্ট মাত্রায় খাওয়া উচিত।আমে যেহেতু চিনির পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীরা আম খুব অল্প পরিমাণ খেতে পারবে।
আমে থাকে প্রচুর ফাইবার।তাই আম খেতে হবে সকালের খাবার খাওয়ার পর।আম খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকালে ও বিকালে।
খালি পেটে আম খাওয়ার অপকারিতা
খালি পেটে আম খেলে তেমন কোনও সমস্যা হবে না।খালি পেটে আম খেলে পেটের ভিতর এসিড এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।তাছাড়া কোনও সমস্যা নাই।যাদের এসিডি সমস্যা রয়েছে তাদের খালি পেটে আম খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া যাবে কি
হ্যাঁ অবশ্যই যাবে।কারণ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলার প্রচুর পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়।আম থেকে ভালো পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়।কাঁচা আমের চেয়ে পাকা আম খাওয়া বেশি ভালো হবে।
আজকের পোস্টটি হতে আম খাওয়ার উপকারীতা ও অপকারীতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।এরকম আরও পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।
Ami jante chay
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন