বর্তমানে আমাদের মাঝে কমন একটা সমস্যা হচ্ছে চোখ উঠা।এটা বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে খুবই হচ্ছে।বলতে গেলে পারিবারের একজন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে বাকি সদস্যরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।আর এই সময়ে চোখ উঠা রোগের প্রার্দুভাব অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
চোখ উঠা রোগ কেন হয়
আমাদের চোখের মধ্যে কনজাংটিভা নামের একটা আরবন রয়েছে।এই আবরন কোনও কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চোখে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।এরফলে চোখ লাল হতে শুরু করে।আর এই রোগকে আমরা বলে থাকি চোখ উঠা রোগ।মেডিকেলের ভাষায় এই রোগকে বলে থাকে 'কনজাংটিভাইটিস'।অনেক কারণে আমাদের চোখ উঠা রোগ হতে পারে।
- জীবাণুর কারণে
- ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে
- চোখে এলার্জির কারণে
- এডিনো ভাইরাসের কারণে
- বিভিন্ন ইনফেকশনের কারণে
চোখ উঠা রোগ যেভাবে ছড়ায়
এই রোগ হচ্ছে ছোঁয়াছে রোগ।একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে অন্য একজন সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এই রোগ ভাইরাসের কারণে হলে সেই রোগ সহজেই একজনের থেকে অন্যজনের কাছে যায়।যখন আক্রান্ত ব্যক্তি তার হাত দিয়ে চোখ মুছতে যায় তখন এই ভাইরাস তার হাতে চলে যায়।আর এই হাত সে যেখানেই স্পর্শ করবে সেখানেই এই ভাইরাস চলে যাবে।সে যদি টেবিলের উপর হাতে দেয় সেই ভাইরাস টেবিলের উপর চলে যাবে।
অন্য যে কেউ তার ব্যবহৃত তোয়াল,কাপড়,মোবাইল বা যেকোনও জিনিস স্পর্শ করলে সেও এই রোগে আক্রান্ত হবে।
চোখ উঠা রোগের লক্ষণ
চোখ উঠা রোগে কেউ আক্রান্ত হলে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পাবে।তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- চোখ লাল হয়ে যাবে
- চোখে ব্যাথা হবে
- চোখ জ্বালা করবে
- চোখে অস্বস্তি শুরু হবে
- অনেক সময় চোখ ফুলে উঠবে
- ঘুম থেকে উঠে দেখবেন চোখের পাতা দুটি একসাথে লেগে থাকবে।যা সহজেই খুলতে চাইবে না
- চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হবে
- বেশি আলো সহ্য করতে পারবে না
চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা
চোখ উঠা একটা জটিল রোগ।এই রোগ হয়ে গেলে পরবর্তীতে চিকিৎসা না করলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনও চিকিৎসা নেই।এই রোগ চিকিৎসা না করলেও অনেক সময় এমনিতেই সেরে যায়।এই রোগ সারতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।
চোখে প্রচন্ড ব্যাথা বা অস্বস্তি লাগলে ডাক্তারের কাছ থেকে ড্রপ নিয়ে আসতে পারেন।এছাড়া এলার্জির কারণে চোখে যদি চুলকানি হয় তাহলে এন্টি-হিস্টামিন খেতে পারেন।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ বা ড্রপ ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
আরও পড়ুন
চিরতরে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায়
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
চোখ উঠা রোগ যেহেতু ছোঁয়াছে রোগ সেহেতু এই রোগের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলা দরকার।কারণ একজনের কাছ থেকে পুরো একটা এলাকা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।তাই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
- হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না
- জন-সমাগম বা জনসমাবেস এড়িয়ে চলতে হবে
- চোখ মোছার জন্য টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।ব্যবহৃত টিস্যু অবশ্যই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে
- চোখ উঠা রোগীকে ঘরের ভিতরে থাকতে হবে।যাতে অন্য কারও কাছে এই ভাইরাস না ছড়ায়
- চোখে যেকোনও ড্রপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চক্ষু ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
- কোন একটি চোখ আক্রান্ত হলে অন্য আরেকটি চোখে যাতে আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।(আক্রান্ত চোখে ব্যবহৃত টিস্যু,রুমাল,তোয়াল দিয়ে অন্য ভালো চোখ মুছা যাবে না)
- চোখে হাত লাগালে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে
- চোখ বেশি ফুলে গেলে বা চোখ দিয়ে অতিরিক্ত পানি পড়লে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
- চোখে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে।যাতে কোনও কিছু চোখে না পড়ে
- চোখ উঠা রোগীর বিছানা আলাদা করতে হবে
- চোখ বাইরের পানি দিয়ে ধোয়া উচিত নয়
চোখ উঠা রোগীর সতর্কতা
এই ধরনের রোগীকে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।নিজেকে দ্রুত সুস্থ করতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
- রাস্তা ঘাটে বের হওয়ার সময় চশমা পড়ে বের হওয়া
- সূর্যের আলোতে কম যাওয়া
- আগুনে বা চুলার পাড়ে না যাওয়া
- টিভি বা মোবাইল ব্যবহার না করা
- নদী-নালাতে গোসল না করা
- ময়লা-আবর্জনা স্থানে না যাওয়া
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন