আপেল একটি সহজলভ্য ও সুস্বাদু ফল।আপেল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল।আপেলের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।আবার আপেলের কিছু অপকারিতাও রয়েছে।আজকে আমরা আপেলের উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে জানব।
আপেলের পুষ্টিগুন
আপেলে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পানি থাকে।আপেল পুষ্টিগুনে ভরপুর।নিচে ১০০ গ্রাম আপেলে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- ক্যালোরি ৫২
- চিনি ১১ গ্রাম প্রায়
- চর্বি ০.১৫ গ্রাম
- ফোলেট ০.০৩ মিলিগ্রাম
- আঁশ ২.৪ গ্রাম
- আমিষ ০.২৬ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম
- জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.১২ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেশিয়াম ৫ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই ০.১২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে ০.০২ মিলিগ্রাম
- ক্যারোটিন ০.০৭ মিলিগ্রাম
- শর্করা ১৩ গ্রাম
- এন্টিঅক্সিডেন্ট
- ফাইবার
- ফ্লোরাইড ০.০২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ ০.০৩ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন ০.০৯১ মিলিগ্রাম
আপেল খাওয়ার উপকারিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে একটা প্রবাদ আছে যে, প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে আর যেতে হবে না।কারণ আপেলের রয়েছে বিশেষ ঔষধি গুণ ও কার্যক্ষমতা।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
কেউ যদি নাস্তার খাবার হিসেবে প্রতিদিন একটি করে আপেল খায় তাহলে সে তার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।কারণ আপেলে রয়েছে ভোজ্য আঁশ ও ফাইবার।যা আপনার ক্ষুদা লাগা থেকে কয়েক ঘণ্টা বিরত রাখবে।
এতে আপনার প্রতিদিন কম ক্যালোরি গ্রহণ করা হবে।প্রতিদিন কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে এমনিতেই আপনার ওজন কমে যাবে।কারণ ওজন বৃদ্ধি করতে ক্যালোরি কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
সঠিক পুষ্টি উপাদান শরীরে থাকলে রোগ কখনই আপনার শরীরে আক্রমণ করতে পারবে না।প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে এই পুষ্টি উপাদান।আপেলে পুষ্টি উপাদান প্রচুর থাকে।এগুলো আপনাকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে।এজন্য প্রতিদিন একটি করে আপেল খেতে হবে।
ক্যান্সার হওয়ার আশংকা দূর করে
ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতি রোগ।এই রোগ হলে বাঁচার সম্ভবনা মাত্র ১০ ভাগ।আপেলই আপনাদের ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে পারে।আপেল বেশির ভাগ ফুসফুসে ক্যান্সার এর কোষকে ধ্বংস করে থাকে।
যারা অতিরিক্ত ধুমপান ও মাদকদ্রব্য সেবন করে তাদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ক্যান্সার হওয়ার আশংকা কমে যায়।কারণ আপেলে থাকা আঁশ জাতীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে থাকে।
মতিষ্কের স্নায়ুর উন্নতি করে
একটা মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে তার মতিষ্ক।মতিষ্কের মাধ্যমে সে সব অনুভূতি বুঝতে ও প্রকাশ করতে পারে।প্রতিদিন আপেল খেলে মতিষ্ক আরও শক্তিশালী হয়।কারণ আপেলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মতিষ্ককের নিউরন গুলোকে আর কর্মক্ষম করে তুলে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাবার তালিকা
দাঁতকে ময়লা মুক্ত করে
দাঁতকে পরিষ্কার রাখা একজন ভদ্র মানুষের কাজ।অনেকের দাঁত যত্নের অভাবে হলদে ভাব হয়ে থাকে।এই হলদে ভাবকে দূর করতে আপেল কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।আপেলে থাকা অম্লীয় পদার্থ এই হলদে ভাব দূর করে দাঁতকে সাদা করে তুলে।এজন্য আপেল খসা সহ খেতে হবে।
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়
শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে।এমনকি 'হার্ট-এটাক' ও হতে পারে।আপেল শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমিয়ে দেয়।এছাড়াও আপেলে থাকা (flavanoyed) স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
হার্টের রোগীর খাবার তালিকা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।এই রোগ থেকে মুক্তি না পেলেও কীভাবে ডায়াবেটিস কে দূরে রাখা যায় সেটা ভাবতে হবে আমাদের।
প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়া ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে।ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।আপেলে থাকা ফাইবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।ফলে ডায়াবেটিস ও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
আপেল আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।প্রতিদিন আপেল খেলে আপেলে থাকা ভিটামিন 'এ' ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে বৃদ্ধি করে তুলে।
আপেল খাওয়ার অপকারিতা
১. আপেলে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট থাকে।অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল খেলে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে প্রবেশ করে।এতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।যাতে ডায়াবেটিস রোগীর ডায়াবেটিস আরও বেড়ে যেতে পারে।
২. একজন মানুষের প্রতিদিনের ফাইবারের চাহিদা ৩০-৪০ গ্রাম। একটা আপেল ও বিভিন্ন শাক-সবজি হতে যা ভালোমত পাওয়া যায়।আর অতিরিক্ত আপেল খেলে শরীরে অতিরিক্ত ফাইবার প্রবেশ করে।অতিরিক্ত ফাইবার আমাদের পেটে ব্যাথা,গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা করে থাকে।
৩. আপেলে থাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যাসিড।যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
৪. আপেল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও ফরমালিন ব্যবহার করা হয়।এই ফরমালিন যুক্ত আপেল খেলে শরীরে কীটনাশক প্রবেশ করে।যা একজন মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।
এজন্য বাজার থেকে ক্রয় করা যেকোনও ফল খাওয়ার আগে ২০-২৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।তারপর ফল খেতে হবে।
খালি পেটে আপেল খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে আপেল খাওয়ার অপকারিতা অনেক।খালি পেটে আপেল খেলে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর হয়।খাদ্য হজম সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়।ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।
আপেল খেলে কি গ্যাস হয়
আপেল খেলে পেটে গ্যাস হওয়ার পরিবর্তে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হয়।কিন্তু প্রতিদিন খেতে হবে একটি করে আপেল।আর অতিরিক্ত আপেল দৈনিক খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হবে।
আপেলে কোন এসিড থাকে
আপেলে কোন এসিড থাকে তা অনেকের অজানা।আপেলে 'ম্যালিক' এসিড বিদ্যমান থাকে।
আপেল খেলে কি ওজন বাড়ে
নিয়ম মেনে আপেল খেলে ওজন বাড়ে না বরং ওজন কমে।আপেলে থাকা ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।এতে ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
আপেল খাওয়ার সঠিক সময়
প্রতিটা ফল সঠিক সময়ে খেলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।তেমনি আপেল সঠিক সময় খেলে সঠিক কার্যকারীতা পাওয়া যাবে।পুষ্টিবিদের মতে,সকালে খালি পেটে একটি করে আপেল খেলে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে মুক্ত থাকা যায়।
আজকের এই পোস্ট হতে আপেল খাওয়ার সঠিক উপকারিতা ও অপকারীতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।ধন্যবাদ সবাইকে।
আপনাদের কে ধন্যবাদ এরকম ১টা পোস্ট দেওয়ার জন্য
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন