আমাদের দেশে সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে কলা হলো অন্যতম।কলা আমাদের শরীরে খুব দ্রুত ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করে।কলা হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্য।কলা এটি বারোমাসি ফল।কারণ কলা সারাবছর জুড়েই পাওয়া যায়।আমরা সাধারণত দুইভাবে কলা খেয়ে থাকি।কাঁচা অবস্থায় ও পাকা অবস্থায়।
আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণে কলা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।কলার দাম কম ও খুব সহজে পাওয়া যায়।আজকে আমরা কলার উপকারীতা ও অপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
কলার পুষ্টি উপাদান
কলার প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে।কলার এত পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আমরা অনেকে জানিই না।কলার পুষ্টি উপাদান গুলো হলোঃ
- ক্যালসিয়াম
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেশিয়াম
- ফাইবার
- আয়রন
- ক্যালোরি/শক্তি
- ভিটামিন 'বি'
- ভিটামিন 'সি'
- কার্বোহাইড্রেট
- ফসফরাস
- প্রোটিন
- ক্যারোটিন
- ফোলেট
- কোলিন
- সেলেনিয়াম
- এন্টিঅক্সিডেন্ট
কলার উপকারীতা
অন্যান্য সস্তা ফলের চেয়ে কলার উপকারীতা হাজার গুণ বেশি।আমরা প্রতিনিয়ত কলা খেলে ভালো উপকার পেয়ে থাকব।বিভিন্ন রোগ হতে আমাদের রক্ষা করতে কলা বেশ কার্যকরী।
কিডনি ভালো রাখে
কিডনির সমস্যা অনেকেরই হয়ে থাকে।কিডনিতে পাথর হওয়া,প্রসাবে সমস্যা হওয়া,কিডনি নষ্ট হওয়া এই সমস্যা গুলো বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।প্রতিনিয়ত কলা খেলে এই রোগ গুলো হওয়ার সম্ভবনা ৫০% কমে যায়।
কারণ কলাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে।
যেসব খাবার আপনার কিডনি নষ্ট করে দিতে পারে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।এই কোষ্ঠকাঠিন্য মারাত্মক সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করতে প্রতিনিয়ত অন্তত একটি কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।কলাতে রয়েছে ফাইবার।আর ফাইবার দ্রুত খাদ্য হজমে সহায়তা করে থাকে।একটি কলাতে ৩ গ্রামের মতো ফাইবার বিদ্যমান থাকে।
রক্ত স্বল্পতা দূর করে
আমাদের শরীরে রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ কম থাকা।আর রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়রনের।আর কলাতে প্রচুর পরিমানে আয়রন পাওয়া যায়।তাই কলা খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
শক্তি বৃদ্ধি করে
আমাদের শরীর চালনার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত শক্তির।আর শরীর এই শক্তি গ্রহণ করে বিভিন্ন খাদ্য হতে।কলা খেলে আমাদের শরীরে ভালো পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়।বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করে থাকে তাদের প্রতিনিয়ত কলা খাওয়া উচিত।
একটি কলাতে শক্তি/ক্যালোরি থাকে ১০৬ গ্রাম।যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক শক্তি যোগায়।
ত্বক ও চুলকে সুস্থ রাখে
আমাদের ত্বক ও চুলে অনেক কারণে খারাপ অবস্থার তৈরি হয়।চুল ও ত্বকের যত্নে কলা ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
কলা আমাদের শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কালো দাগ দূর করতে ভালো কাজ করে থাকে।এছাড়া চুলা পড়া বন্ধ করে ও চুলকে সতেজ রাখে।কলাতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের এই কাজ গুলো করে থাকে।
হজমে সহায়তা করে
আমাদের শরীরে দৈনিক যে পরিমাণ ফাইবার দরকার তার ১০-১৫% একটি মাঝারি কলাতে পাওয়া যায়।ফাইবার আমাদের অন্ত্রকে সুস্থ রাখে ও ক্ষতিকর পরজীবীর হাত থেকে রক্ষা করে।
ফাইবার একমাত্র উপাদান যেটা আমাদের খাদ্যকে সঠিক প্রক্রিয়ায় হজমে সহায়তা করে।প্রতিদিন ২ টা করে কলা খেলে খাদ্য হজমে ভালো উপকারী হবে।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখে
আমাদের শরীরে লিউকেমিয়া নামক কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে ক্যান্সারের উপসর্গ দেখা যায়।এই লিউকেমিয়া নামক কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঠেকাতে কাজ করে লেকটিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট।
এই এন্টিঅক্সিডেন্ট কে লেকটিন প্রোটিন ও বলা হয়।পাকা কলা হতে ১.৫-২ গ্রাম লেকটিন পাওয়া যায়।তাই প্রতিনিয়ত কলা খেলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ রোগ একটা মারাত্মক সমস্যা।আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে পটাশিয়াম এর প্রয়োজন।একটি মাঝারি কলা হতে দৈহিক চাহিদার ১০% এর বেশি পটাশিয়াম পাওয়া যায়।কলায় উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম থাকে ও সোডিয়াম কম থাকে যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ হতে রক্ষা করে।
হার্টের রোগীর সঠিক খাদ্য তালিকা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
কলা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।কলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।কলাতে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে দেয়।এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কারণ শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়।আর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস ও বেড়ে যায়
কলার অপকারীতা
প্রতিটা ফলের উপকারীতা ও অপকারীতা রয়েছে।কলার ও তেমনি উপকারীতা ও অপকারীতা রয়েছে।নিচে কলার উপকারীতা ও অপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১. অতিরিক্ত পরিমাণে কলা খেলে শরীরে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ অধিক বৃদ্ধি পেতে পারে।এতে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
- মাথা ঘুরা
- পেশির খিচুনি
- কিডনির সমস্যা
- হার্টের সমস্যা
২. ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কলা উপকারী হলেও পাকা কলা বেশি খেলেই সমস্যা।পাকা কলা অতিরিক্ত খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
৩. কলা অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।কারণ একটি মাঝারি আকারের কলাতে ১০৬ গ্রামের মতো ক্যালোরি বিদ্যমান থাকে।অতিরিক্ত কলা খেলে শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৪. কলাতে অনেকের এলার্জি থাকতে পারে।কলা খেলে অনেকের শরীর বিভিন্ন অংশ ফুলে যেতে পারে।
৫. কলা অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।কারণ কলাতে থাকা ফাইবার ও ফ্রুটোজ একসাথে মিশে গ্যাসের সমস্যা করতে পারে।
৬. কলায় থাকা বিভিন্ন উপাদান দাঁতের কণায় আটকে গিয়ে দাঁতের ক্ষয় করতে পারে।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
খালি পেটে কখনো কলা খাওয়া উচিত নয়।কারণ কলাতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার ও পটাশিয়াম।খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিক ও ডায়রিয়া হতে পারে।অবশ্যই ভারী কিছু খাওয়ার পর কলা খেতে হবে।
আশাকরি সকলেই এই পোস্ট হতে কলার উপকারীতা ও অপকারীতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন