গাছ যেমন সঠিকভাবে বেড়ে না উঠলে ভালো ফল হয় না তেমনি একজন গর্ভবতী মা সঠিক যত্ন ও পুষ্টিকর খাদ্য না পেলে সন্তান সুস্বাস্থবান হয় না। 

গর্ভবতী মহিলার গর্ভবতী হওয়ার পর ৬-১০ কেজি ওজন বৃদ্ধি পায়।এজন্য একজন গর্ভবতী মহিলার নিজের স্বাস্থ্য ও সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয়।

গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকা,গর্ভবতী মহিলার খাবার,৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা,গর্ভবতী মায়ের কি কি খাবার খাওয়া উচিত না,গর্ভবতী মহিলাদের খাবার,গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকা,গর্ভবতী মহিলাদের খাবার তালিকা,গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা,গর্ভাবস্থায় কি কিটো ডায়েট করা যাবে,


একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম তিন মাস অনেক কষ্টদায়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়।কারণ এই সময়ে গর্ভবতী মহিলা খেতে পারে না বা অরুচি,বমি করে থাকে ও রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা হয়ে থাকে।

তাই একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য পরিবারের লোকদের অবশ্যই গর্ভবতী মহিলার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।এসময় সুষম খাদ্যের পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলা যাতে সঠিক বিশ্রাম ও ঘুম পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আজকে আমরা আলোচনা করব একজন গর্ভবতী মহিলা সুস্থ ও সবল সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য যেসব খাবার গ্রহণ করবে তার একটি তালিকা নিয়ে।

গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকা

আয়োডিন যুক্ত খাবার

একজন শিশুর সঠিক বিকাশ ও শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য আয়োডিনযুক্ত খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ আয়োডিনের অভাবে শরীরবৃত্তীয় কাজ সঠিক ভাবে না হওয়ায় একজন শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।আয়োডিন যুক্ত খাবার গর্ভ অবস্থায় বেশি বেশি খাওয়া উচিৎ।যেসব খাবারে মিলবে আয়োডিনঃ আয়োডিন যুক্ত লবন,দুধ,চিংড়ি,টক দই,কলা ও সিদ্ধ ডিমে।

ফলিক এসিড

গর্ভের সন্তানের হৃৎপিন্ড ও বিভিন্ন অঙ্গহানি রোধে কাজ করে ফলিক এসিড।ফলিক এসিডকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার বলা হয়।যেসব খাবারে ফলিক এসিড বিদ্যমানঃ আম,জাম,কাঁঠাল,কলা,পুঁইশাক,লালশাক,সরিষাশাক,পাটাশাক,লাউ,বাঁধাকপি,ফুলকপি,সূর্যমূখী বীজ ইত্যাদি।

ভিটামিন বি জাতীয় খাবারের তালিকা
   

আয়রন যুক্ত খাবার 

একজন গর্ভবতী মহিলার আয়রনের অভাব থাকলে তার সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।এর ফলে সে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে ভূগতে থাকে।

আয়রন জাতীয় খাবার তালিকা
   

আয়রনের ঘাটতির কারণে একজন শিশুর রক্তশূন্যতা রোগ হতে পারে।তাই গর্ভ অবস্থায় আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ।যেসব খাবারে প্রচুর পরিমানে আয়রন পাওয়া যায়ঃ কচুশাক,লালশাক,কাচা কলা,ডালিম,পালংশাক,বাদাম,শিং মাছ,মাগুর মাছ ইত্যাদি।

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার

ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে থাকে।গর্ভ অবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলা যদি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার না খায় তাহলে সে কোমড় ব্যাথায় ভুগতে থাকবে।তার থেকে যে সন্তান জন্ম নেবে তার হাড়গোড় থাকবে অনেক দূর্বল।তাই গর্ভ অবস্থায় প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার।যেসব খাবারে ক্যালসিয়াম পাবেনঃ দুধ,দই,পনির,ঘি,ফলমূল,শাকসবজি,বাদাম ইত্যাদি।

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
     

'ভিটামিন এ' যুক্ত খাবার 

গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকা,গর্ভবতী মহিলার খাবার,৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা,গর্ভবতী মায়ের কি কি খাবার খাওয়া উচিত না,গর্ভবতী মহিলাদের খাবার,গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকা,গর্ভবতী মহিলাদের খাবার তালিকা,গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা,গর্ভাবস্থায় কি কিটো ডায়েট করা যাবে,

 

চোখের দৃষ্টিশক্তির জন্য 'ভিটামিন এ' এর প্রয়োজন।আর 'ভিটামিন এ' এর অভাব হলে শিশুর দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।যেসব খাবারে 'ভিটামিন এ' বিদ্যমানঃ সব প্রকার ফলমূল,সবুজ শাকসবজি,ডিমের কুসুম ঢেলা ও মলা মাছ।

জিংক যুক্ত খাবার 

মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা খনিজ উপাদান হলো জিংক।গর্ভ অবস্থায় জিংক এর অভাব হলে একজন শিশু বিভিন্ন রোগে ভূগতে থাকে।যেমনঃ জিহ্বায় প্রদাহ,মুখে ঘা,হাতে পায়ে প্রদাহ,অস্বাভাবিক আচরণ,ক্ষুধামন্দা সহ আর অনেক রোগ।

তাই গর্ভ অবস্থায় জিংক জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।জিংক জাতীয় খাবারঃ চিনাবাদাম,মশুর ডাল,সামুদ্রিক মাছ,দুগ্ধজাতীয় পণ্য,মাশরুম,শিম,টমেটো,গরুর মাংস,ছাগলের কলিজা ইত্যাদি।

'ভিটামিন ডি' যুক্ত খাবার 

'ভিটামিন ডি' আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পুষ্টি উপাদান।'ভিটামিন ডি' এর অভাবে বিভিন্ন রোগ হতে পারে যেমনঃ শিশুর বিকাশ কম হওয়া,শিশুর হাতে পায়ের হাড় বাঁকা হওয়া,শিশুর চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এজন্য সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে গর্ভবতী মায়ের 'ভিটামিন ডি' যুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ।যেসব খাবারে 'ভিটামিন ডি' থাকে।যেমনঃ দুধ,গরু ছাগলের কলিজা,মাছের তেল,মাশরুম,দই ইত্যাদি।

এছাড়া সন্তান জন্ম নেওয়ার পর 'ভিটামিন ডি' এর চাহিদা পূরণে সকলবেলা ১১ টার আগে শিশুকে সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ রাখতে হবে।কারণ প্রাকৃতিকভাবে 'ভিটামিন ডি' এর প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। 

গর্ভবতী মহিলাদের খাবার রুটিন

গর্ভবতী মহিলার জন্য সকাল দুপুর ও রাতে যেই নিয়মে খাদ্য খেতে হবে।

সকালবেলা

সকালে ঘুম থেকে উঠে গর্ভবতী মহিলাদের ভারী খাবার খাওয়া উচিত নয়।সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটা-চলা করে নেওয়া উচিৎ।তারপর নাস্তা হিসেবে মুড়ি বা বিস্কুট খেয়ে নিতে পারেন।

এরপর ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর সবজি বা ডাল দিয়ে ২-৩ রুটি খেয়ে নিতে পারেন।এরসাথে একটি সিদ্ধ ডিম খেয়ে নিতে পারে।

দুপুরবেলা

দুপুরের ভারি কিছু খেতে হবে।ভারী খাবার হিসেবে ভাত খেতে হবে।ভাতের সাথে ডাল,সবজি ও মাছ-মাংস রাখতে হবে।দুপুরের খাবারে সালাদ অবশ্যই রাখতে হবে।দুপুরের খাবারের পর একটু দই খেয়ে নিতে পারেন।

বিকালবেলা

বিকালের খাবার হিসেবে তাজা ফলমূল খেতে হবে।যেকোনও ১-২ টা ফল খেতে পারেন।

রাতেরবেলা

রাতের বেলা ভাত বা রুটি খেতে পারেন।এর সাথে অবশ্যই ডাল ও শাক-সবজি রাখতে হবে।রাতের খাবার খাওয়ার পর অবশ্যই এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিবেন।                               

এই খাবার গুলো কোনও গর্ভবতী মহিলা নিয়ম মেনে গ্রহণ করলে অবশ্যই সন্তান ও মা সুস্থ থাকবে।                                                        

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন