আমাদের শরীরের বিশেষ অঙ্গ গুলোর মধ্যে মতিষ্ক হচ্ছে অন্যতম।আমাদের স্মৃতিশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মতিষ্ক।এই মতিস্ক কোনও কারণে উল্টোভাবে কাজ করলে মানুষ আর মানুষ থাকে না হয়ে যায় পাগল।
আমাদের বয়স যখন ৩৫ থেকে ৪০ এর উপরে যায় তখন ধীরে ধীরে মতিষ্কের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।তখন আমরা ভুলে যেতে শুরু করি।এটা বয়স বাড়ার কারণে হয়ে থাকে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক ভাবেই হয়ে থাকে এটা।
আবার অনেকে আছে যারা অল্প বয়সেই কোনও কিছু মনে রাখতে পারে না।পড়া পড়তে গেলে পড়া মনে রাখতে পারে না,কোন কিছু খুঁজতে ঘর থেকে রান্নাঘর গেলেই হারিয়ে ফেলে যে কি খুঁজতে এসেছে।এই সমস্যাটা হচ্ছে একজন মানুষের জন্য অস্বাভাবিক।
বিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যা টাকে স্মৃতিভ্রম বা স্মৃতিশক্তি নষ্ট বলা হয়।এই সমস্যা অনেক কারণে হতে পারে।যেমনঃ
- অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক দুশ্চিন্তা করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমানো
- সুস্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভাব
- সৃজনশীল বা নতুন কিছু সৃষ্টি করার প্রবণতা না থাকা
আজকে আমরা কথা বলব স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার ও কিছু কৌশল সম্পর্কে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাবার
টমেটো
টমেটো আমাদের দেশের জনপ্রিয় সবজি গুলোর মধ্যে একটি।টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট।
এই লাইকোপেন আমাদের স্মৃতিশক্তি সক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করেন।এজন্য প্রতিদিন সালাদ হিসেবে টমেটো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি জাতীয় খাবার
ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি জাতীয় খাবার আমাদের মতিষ্ককে শীতল ও ঠাণ্ডা রাখে।এর ফলে মতিষ্ক ঠিকঠাক ভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকা
ওমেগা-৩ জাতীয় মাছ
ওমেগা-৩ বিদ্যমান মাছ গুলো বেশিরভাগ সামুদ্রিক মাছ হয়ে থাকে।স্যামন,টুনা ও ম্যাকরেল ওমেগা-৩ অ্যাসিডের ভালো উৎস।এসব মাছ থেকে আমরা ওমেগা-৩ ফ্যাট পেয়ে থাকি।
এই ওমেগা-৩ ফ্যাট আমাদের মতিষ্ক গঠন ও নতুন কোষ তৈরিতে কাজ করে।স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য এই মাছগুলো মাঝেমধ্যে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কাঠবাদাম
আমাদের দেশের আয়ুর্বেদিক ফর্মূলার একটা উপাদান হচ্ছে কাঠবাদাম।কাঠবাদামে এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান।যা আমাদের মতিষ্কে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন রাতের বেলা ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।তারপর সকালবেলা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে খেয়ে ফেলুন।এভাবে টানা কয়েকমাস খেলে স্মৃতিশক্তির পরিবর্তন নিজেই দেখতে পারবেন।
ডিমের হলুদ অংশ
ডিমের হলুদ অংশ বলতে সিদ্ধ ডিমের হলুদ অংশকে বুঝায়।ডিমের হলুদ অংশে নিউট্রিয়েন্ট বিদ্যমান।এই নিউট্রিয়েন্ট আমাদের স্মৃতিশক্তিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।এতে আমরা ভূলে কম যাই।প্রতিদিন অন্তত একটা করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সবুজ শাক-সবজি
আমাদের প্রতিবারের খাদ্যে শাক-সবজি রাখা উচিত।শাক-সবজি শরীরের জন্য অনেক উপকারী।শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও ফাইবার থাকে।যেগুলো বহু রোগ হতে আমাদের পরিত্রাণ দেয়।
শাক-সবজিতে থাকা ভিটামিন আমাদের মেধাশক্তি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছাগলের কলিজা
ছাগলের মাংসের চেয়ে ছাগলের কলিজা হাজার গুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ।ছাগলের কলিজাতে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও জিংক রয়েছে।যা আমাদের মতিষ্ককে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কাজ করে।
মধু
মধু একটি প্রকৃতির তৈরি খাদ্য।মধু বিভিন্ন রোগের মহাঔষধ।মধু খেলে মানসিক চাপ কম হয় ও আমাদের মতিষ্ক শীতল হয়।প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ পরিমাণ মধু খাওয়া উচিত।
কলা
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি।যা আমাদের মতিষ্ক ঠান্ডা রাখে ও সুষ্ঠভাবে যেকোনও কাজ করতে সহায়তা করে।প্রতিদিন রাতে একটি করে কলা খান।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কৌশল
কিছু কৌশল ও কিছু কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্মৃতি শক্তিকে বৃদ্ধি করতে পারি।
ঘুম
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।আমাদের স্বাস্থ্য কতটা ভালো তা নির্ভর করে আমাদের ঘুমের উপর।
পরিমিত ঘুম যেমন আমাদের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে তেমনি আমাদের স্মৃতিশক্তি কে ও ভালো রাখতে সাহায্য করে।ঘুম কম হলে অস্তিরতা ও মাথাঘুরার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।
আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের যেমন বিশ্রামের প্রয়োজন তেমনি মতিষ্কের ও বিশ্রাম প্রয়োজন।মতিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘুম।
ব্যায়াম
ব্যায়ার যেমন শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে তেমনি মতিষ্ককে ও সুস্থ রাখে।আমাদের মতিষ্কের আকার বৃদ্ধিতে সিন্যাপস কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।আর নিয়মিত শরীরচর্চা করলে সিন্যাপসের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
সৃজনশীলতা
প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।আগে যদি কবিতা পড়তেন তাহলে এখন নিজে কবিতা লেখার চেষ্টা করুন।যেরকম কাজ আপনার ভালো লাগে তা করার চেষ্টা করুন।বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে জান ও সেই জায়গা সম্পর্কে নোট করুন।এই সৃজনশীলতা আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করবে।
গান শুনুন
যেসব গান শুনলে আপনার মানসিক কোনও চিন্তা আসবে না সেসব গান প্রতিনিয়ত শুনার চেষ্টা করুন।এতে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর হবে ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
আপনার স্মৃতিশক্তি কম হলে এই নিয়ম ও খাদ্য গুলো ফলো করে নিজের স্মৃতিশক্তিকে ধরে রাখতে পারবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন