ডায়াবেটিস কেন হয়
আমাদের শরীরে থাকা অগ্নাশয় প্রতিদিন ইনসুলিন তৈরি করে থাকে।এই অগ্নাশয় যদি ইনসুলিন তৈরিতে ব্যর্থ হয় বা তৈরিকৃত ইনসুলিন সঠিক কাজে লাগাতে না পারে এরফলে যে রোগের সৃষ্টি হয় তাই হচ্ছে ডায়াবেটিস।সাধারণত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক আকারে বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিস একটা মারাত্মক রোগ যেটা নির্মূল করার উপায় আজও বের হয় নাই।ডায়াবেটিস নির্মূল করা না গেলেও কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে কিছু খাবার পরিহার করতে হবে ও কিছু খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা
ডায়াবেটিস রোগ হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো।এরমধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করবে।
শস্য জাতীয় খাদ্য
আপনি যদি আপনার শরীরের রক্তে চিনি বা গ্লুকোজ এর মাত্রা কমাতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যে শস্য ও দানাদার খাদ্য রাখুন।শস্য জাতীয় খাদ্যে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।যা ধীর গতিতে শরীরে চিনি সরবরাহ করে থাকে।ফলে ডায়াবেটিস এর কোনও ঝুঁকি থাকে না।
আরও পড়ুন
সবুজ চা
আমরা বেশিরভাগ মানুষ দুধ চা ও লাল চা খেয়ে অভ্যস্ত।কিন্তু এগুলো চা না খেয়ে যদি আমরা (গ্রীণ টি) সবুজ চা খাই তাহলে আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী হবে তা আমরা অনেকেই জানি না।সবুজ চা আমাদের শরীরের ইনসুলিন যেরকম কাজ করে সেই রকম কাজ করবে।প্রতিদিন দুই কাপ করে সবুজ চা খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনায় থাকবে না।এছাড়া আরও অনেক রোগ হতে মুক্তি লাভ করা যাবে।
পালংশাক
পালংশাকে ভিটামিন,খনিজ উপাদান ও প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।এছাড়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় পালংশাক।বিভিন্ন গবেষকদের মতে, প্রতিনিয়ত পালংশাক খেলে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি ১০থেকে ১২ শতাংশ কমে আসে।
বাদাম
অনেক পুষ্টিকর ও ফাইবার সমৃদ্ধ একটা খাবারের নাম হচ্ছে বাদাম।বাদাম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।বাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য,হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমে যায়।কেউ যদি প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে আসবে।তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় বাদাম রাখুন।
ওমেগা-৩ জাতীয় মাছ
ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমাতে যেসব মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাট বিদ্যমান সেসব মাছ খেতে হবে।ওমেগা-৩ জাতীয় মাছ গুলো হলোঃ ইলিশ,টুনা,স্যামন,হেরিং ইত্যাদি।ওমেগা-৩ ফ্যাট আমাদের শরীরে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।এতে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমে যায়।
ভিটামিন সি
আমাদের শরীরে থাকা গ্লুকোজ কে ভাঙ্গতে ভিটামিন সি খুবই কার্যকরী।ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রতিনিয়ত খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়।ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকা
ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে।যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।এজন্য অবশ্যই সিদ্ধ ডিম খেতে হবে।
দই
ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমানোর জন্য বাজারে কিনা দইয়ের চেয়ে বাড়িতে দুধ থেকে তৈরি দই খেতে হবে।টক দই রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।
ডায়াবেটিস হলে যেসব খাবার নিষিদ্ধ
মিষ্টি
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যাদের মিষ্টি জাতীয় খাবার খুবই পছন্দ।এই মিষ্টি প্রিয় লোকের আগে পরীক্ষা করা উচিত যে তাদের ডায়াবেটিস আছে কী না।
আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত কথা হচ্ছে যে ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।এটা একটা পুরাই ভূল ধারণা।আমরা ভাত খেলে যেমন শরীরে শর্করার চাহিদা পূরণ করে তেমনি মিষ্টি খেলেও শর্করার চাহিদা পূরণ হয়।মিষ্টি খাওয়া যাবে তা হচ্ছে খুবই সামান্য।কারণ অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে শরীরে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাবে।যার কারণে রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বেড়ে যাবে।এর ফলে ডায়াবেটিস ও বেড়ে যাবে।
ভাত
ভাত একটি শর্করা জাতীয় খাবার।ডায়াবেটিস হলে ভাত খেতে পারবেন না তা কিন্তু নয়।ডায়াবেটিস রোগী হলে ভাত তিনবারের জায়গায় দুইবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।আর একবার রুটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।কোনও ভাবেই যাতে শর্করার পরিমাণ শরীরে বেড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
আলু
আলু একটি শর্করা জাতীয় সবজি।শর্করা জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীর না খাওয়ায় ভালো।কারণ শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেলে শরীরের যতটুকু দরকার শরীর তা নিয়ে বাকিগুলো শরীরে জমা হয়ে গ্লুকোজ এ পরিণত হয়।যার কারণে ডায়াবেটিস দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে উপরে দেখানো নিয়ম গুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন