মানবদেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম।আমাদের দেশে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যায় কিডনি রোগের কারণে।ভুল খাদ্য গ্রহণের কারণে আমরা নিজেই নিজের কিডনির ক্ষতি করছি।
আমাদের দেহে ছাকনির মতো কাজ করে কিডনি।আমাদের দেহে উৎপন্ন বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ কিনডি বাইরে বের করে দেয়।আমাদের দেহের কিডনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার রক্ত শোধন করে ২ লিটার বর্জ্য বাইরে বের করে দেয়।
আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন রকম খাবার খেয়ে থাকি।এরমধ্যে কিছু খাবার আছে আমাদের কিডনির জন্য খুবই উপকারী।আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো একটু বেশি গ্রহণ করলে আমাদের কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কিডনি নষ্ট হতে পারে এমন কয়েকটি খাবার নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব।
কিডনির জন্য ক্ষতিকর খাবার
দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য
দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এর প্রধান উৎস।আমরা কম বেশি প্রতিদিন দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকি।দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য গুলো হচ্ছে দই,পনির ও ঘি।
এই দুগ্ধ জাতীয় খাবার ভুল করে কখনও অতিরিক্ত খাবেন না।কারণ এতে থাকা ক্যালসিয়াম আপনার কিডনিতে পাথর হতে সাহায্য করবে।আপনি যদি অতিরিক্ত দুগ্ধ জাতীয় খাবার প্রতিদিন খান তাহলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম উৎপাদন হবে।
এই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম আপনার কিডনির উপর চাপ প্রয়োগ করবে ও প্রস্রাব এর সাথে বাইরে যাবে।এই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম এক সময় ক্যালসিয়াম কার্বোনেটে রূপান্ত হবে।আর এর থেকে তৈরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
মাংস
মাংস একটি সুস্বাদু খাবার।এমন কেউ নাই যে মাংস খেতে ভালোবাসে না।গরু ও ছাগলের মাংস একটি প্রোটিন জাতীয় খাবার।
অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আমাদের কিডনির জন্য ক্ষতিকর।কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত প্রোটিন বা চর্বি কিডনি সঠিকভাবে পরিপাক করতে পারে না।পরিপাক করতে পারলেও প্রচুর পরিমানে সময় নেয়।
আর আপনি যদি মাংস অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত প্রোটিন তৈরি হবে।যা পরিপাক করতে আপনার কিডনির অনেক সময় লাগবে।এতে কিডনি ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে যাবে।একসময় আপনার কিডনি নষ্ট বা ড্যামেজ হয়ে যাবে।এজন্য অতিরিক্ত পরিমাণ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে (বিশেষ করে গরু ও ছাগলের মাংস)।
আরও পড়ুন
লবণ
আমাদের প্রতিদিনের তরকারিতে ব্যবহার করা একটা পণ্যের নাম হল লবণ।লবণে পর্যাপ্ত পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে।আমাদের শরীরে ইলেকট্রলাইড এর ভারসাম্য বজায় রাখে এই সোডিয়াম।
আর এই লবণ অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিডনির সমস্যা সহ রক্তশূন্যতা ও হতে পারে।কারণ অতিরিক্ত সোডিয়াম কিনডিতে পানি জমতে সাহায্য করে।আর কিডনিতে অতিরিক্ত পানি জমার কারণে একসময় কিডনি অকেজো হয়ে যায়।এজন্য প্রয়োজনের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
অ্যালকোহল বা মদ্যপান
আমাদের সমাজে অনেকে আছে মদ্যপান করে থাকে।এটি সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ একটি কাজ।কারণ এটি কিডনি মতিষ্ক ও শরীরের অনেক অঙ্গের ক্ষতি করে।
আর অতিরিক্ত মদ্যপান করলে কিডনি নষ্ট অবশ্যই হবে।কিডনিতে থাকা নেফ্রন ছাকনির মতো কাজ করে থাকে।আর অ্যালকোহল গ্রহণ করলে সরাসরি এই নেফ্রনে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।যা ধীরে ধীরে কিডনিকে নষ্ট করে দেয়।
ব্যাথা দূর করা ঔষধ
আমাদের শরীরে সামান্য কোথাও আঘাত লাগলে বা ব্যাথা করলেই আমরা ঔষধ সেবন করার জন্য মরিয়া হয়ে যাই।আর এই ব্যাথা দূর করার ঔষধ অতিরিক্ত সেবন করলে আমাদের শরীরের কতটা ক্ষতি হয় সেটা আমরা জানি না।
বেশির ভাগ ব্যাথানাশক ঔষধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত হয়।ব্যাথা দূর করার ঔষধ অতিরিক্ত সেবন করলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ কমে যায় ও কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।এরফলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
কোমল পানীয়
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমে কোমল পানীয় পান করার উৎসব পড়ে যায়।এসময় বেশির ভাগ মানুষ কোমল পানীয় পান করে থাকে।এদের মধ্যে অনেকে তো দিনে ৫-৬ টা কোমল পানীয় বোতল খেয়ে ফেলে।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কোমল পানীয় অতিরিক্ত পাওয়া যায়।
এই কোমল পানীয় অতিরিক্ত পানে কিডনির যে কত বড় সমস্যা হয় সেটা আমরা অনেকে জানি না।কোমল পানীয় তৈরি করা হয় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে।এই কোমল পানীয় অতিরিক্ত পান করলে কিডনি সঠিক পানি বিপাক করতে পারে না এই রাসায়নিক পদার্থ গুলোর কারণে।এতে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
ফাস্টফুড
আমরা সকলেই 'ফাস্টফুড' খেতে ভালোবাসি।এর কারণ হচ্ছে 'ফাস্টফুড' খুব দ্রুত তৈরি হয় ও খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।ভেলপুরি,পিজ্জা,মগলাই,সিংড়া,বার্গার ইত্যাদি হচ্ছে 'ফাস্টফুড' জাতীয় খাবার।
'ফাস্টফুড' যে উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় সেগুলো বেশিরভাগই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়।তাই এগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
পানি
পানি কিডনির জন্য একদিকে উপকারী আবার অন্যদিকে ক্ষতিকর।একজন মানুষের দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।এটা যদি কেউ পান করে তাহলে তার জন্য পানি উপকারী।অন্যদিকে কেউ দিনে ২ লিটারের কম পানি পান করলে সেটা তার জন্য ক্ষতিকর।
কিডনি আমাদের শরীর হতে পরিপাকের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে।এসময় কিডনির পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি প্রয়োজন হয়।এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পেলে সঠিকভাবে বর্জ্য পদার্থ কিডনি অপসারণ করতে পারে না।এতে কিছু বর্জ্য পদার্থ কিডনিতে আটকা পড়ে যায়।এভাবে একসময় কিডনি দূর্বল হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।এতে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়।
উপরে দেখানো খাদ্য গুলো অবশ্যই আপনার কিডনি নষ্ট করতে পারে।খাবার গুলো খেতে পারবেন কিন্তু খুব অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
Olpo r besi mane kototuku sothik ta kototuk
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন