আমাদের মানবদেহ মোট ২০৬ টি হাড় নিয়ে গঠিত।একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ছোট বড় মোট ৩২ দাঁত রয়েছে।এই হাড় ও দাঁতকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম শরীরে লাগে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে শতকরা ৯৯% ক্যালসিয়াম খরচ হয় দাঁত ও হাড়ে আর ১% অন্যান্য জায়গায়।আর শরীরে ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হলে হাড় ও দাঁতের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগতে থাকবেন।
ক্যালসিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ
- শরীরের পেশিগুলো ব্যাথা করবে
- হাত পা ঝিনঝিন করবে
- বসা থেকে উঠতে গেলে অন্যের সাহায্য নিতে হবে
- নখ গুলো ভঙ্গুর হয়ে যাবে
- কোমড়ে ব্যাথা,হাটুতে ব্যাথা করবে
- হাড় ক্ষয় হতে শুরু করবে
- আপনার ঘুমে সমস্যা হবে
- ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যাবে
- দাঁতের মাড়িতে মাংস কমে যাবে এমনকি দাঁত লড়তে থাকবে
- আপনি সবসময় ক্লান্তবোধ করবেন
বয়স ভেদে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা
আমাদের সকলের শরীর এক না।একেক জনের শরীরের জন্য একেক রকম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।নিচে বয়স ভেদে কার শরীরের কি রকম ক্যালসিয়ামের চাহিদা তা দেওয়া হল।
- ১ বছরের নিচের বাচ্চাদের প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৬০ মিলিগ্রাম
- ১ থেকে ৩ বছরের বাচ্চাদের ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিগ্রাম
- ৪ থেকে ৮ বছরের বাচ্চাদের প্রতিদিন ৯৫০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম
- ৯ থেকে ১৮ বছরের জন্য প্রতিদিন ১২৫০ থেকে ১৩০০ মিলিগ্রাম
- ১৯ থেকে ৫০ বছরের জন্য প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম
- ৫০ বছরের উপরের জন্য প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের উপায়
উপরে যে সমস্যা গুলোর কথা বলা হয়েছে সেই সমস্যা গুলো তোমার মধ্যে দেখা দিলে বুঝবেন যে তোমার ক্যালসিয়ামের ঘাটতি আছে।অতিরিক্ত লবণ খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে।কারণ লবণে প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম থাকে যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা প্রদান করে।
অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে অবশ্যই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে।উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত কিছু খাবার নিচে দেওয়া হলো।
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার তালিকা
দুধ
দুধ একটি আমিষ জাতীয় খাবার।দুধ কে ক্যালসিয়াম এর প্রধান উৎস বলা যায়।দুধ একটি সহজলভ্য খাবার।যে কেউ চাইলে প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম করে দুধ পান করতে পারে।১০০ গ্রাম দুধে ৯৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম দুধ পান করলে শরীরের চাহিদার তুলনায় বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
সজনে পাতা
আমাদের বাড়ির আশেপাশে বেড়ে ওঠা একটা গাছের নাম হচ্ছে সজনে গাছ।ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণে সজনে পাতা খেতে পারেন।প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।যা একজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছ সকলেই খাওয়ার সামর্থ রাখে না।সামুদ্রিক মাছের একটু দাম বেশি।ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণে সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন।প্রতি ১০০ গ্রাম সামুদ্রিক মাছে ৩৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।
টকদই
দই খেতে অনেকে ভালোবাসেন আবার অনেকে ভালোবাসেন না।যারা দই খেতে পছন্দ করেন তারা ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণে প্রতিদিন দই খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।প্রতি ১০০ গ্রাম টকদই এ ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।
তিল বীজ
তিল বীজে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে।প্রতিদিন তিল বীজ খেতে না পারলেও মাঝে মধ্যে তিল বীজ খাওয়ার চেষ্টা করবেন।প্রতি ১০০ গ্রাম তিল বীজে ১০০০ মিলিগ্রাম এর বেশি ক্যালসিয়াম থাকে।
বাদাম
আমাদের শরীরের হাড় শক্ত ও দাঁতকে শক্তিশালী করতে বাদামের বিকল্প আর নাই।কারণ বাদামে ক্যালসিয়াম এর পাশাপাশি প্রোটিন,ভিটামিন,ফইবার ও প্রচুর পরিমানে খনিজ পদার্থ রয়েছে।প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।
কমলালেবু
কমলালেবুতে তেমন একটা ক্যালসিয়াম না থাকলেও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে।এই ভিটামিন সি বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য হতে শরীরে দ্রুত ক্যালসিয়াম সংগ্রহে সাহায্য করে।তাই ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণে কমলালেবু খাওয়া যেতে পারে।
ট্যাংরা মাছ
আমাদের দেশের পরিচিত ও খুবই সুস্বাদু একটা মাছের নাম হল টেংরা মাছ।টেংরা অন্যান্য মাছের তুলনায় চাহিদা একটু বেশি তাই দাম ও বেশি।ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণে টেংরা মাছ খেতে পারেন।প্রতি ১০০ গ্রাম টেংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।
শালগম
শালগম হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম এর বড় উৎস।শালগম খেলে হাড় শক্ত হয় ও পেশি শক্তিশালী হয়।এতে কাজের প্রতি মনযোগ বাড়ে।প্রতি ১০০ গ্রাম শালগমে ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।
কারও ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হলে উপরের দেওয়া খাদ্যগুলো খেতে পারেন।সমস্যা গুরুত্বরও হলে অবশ্যই ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন