একজন মানুষের শরীরের প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে রক্ত।কারণ রক্ত আমাদের পুরো শরীরে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।রক্ত অনেক গুলো উপাদান নিয়ে গঠিত হলেও এর মধ্যে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিন হচ্ছে অন্যতম।রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে মানুষ নানারকম সমস্যায় ভূগতে থাকবে।
আমাদের দেহের ধমনি হতে পুরো শরীরে রক্ত সরবরাহ করা হচ্ছে হিমোগ্লোবিনের কাজ।এসময় উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিমোগ্লোবিন আবার ফুসফুসে পাঠিয়ে দিয়ে থাকে।সেটা শ্বাস ত্যাগ করার সময় শরীর হতে বের হয়ে যায়।
রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে গেলে রক্ত পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না।এতে আমাদের শরীর ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে।রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্তশূন্যতা জনিত বিভিন্ন রোগ হয়।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়?
একজন সুস্থ মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ৯৭% হওয়া দরকার।এর চেয়ে কম হলে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভূগতে থাকে।শরীরে রক্ত কম হওয়ার লক্ষণঃ
- শরীর ক্লান্ত লাগা
- মাথা ঘুরা
- মাথা ব্যাথা করা
- বুক ব্যাথা করা
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব হওয়া
- জিহ্বা ব্যাথা করা
- হালকা আঘাতে রক্তপাত হওয়া
- ক্ষুধামন্দা হওয়া
- হাত পা ঠান্ডা হওয়া
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির খাবার
যে খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে সেই খাবার খাওয়া উচিত।রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে আয়রন,প্রোটিন,ভিটামিন বি১২,ফলিক এসিড ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার।ভিটামিন সি জাতীয় ফল
আমাদের দেশে পাওয়া যায় এমন অনেক গুলো ফল রয়েছে ভিটামিন সি যুক্ত।আম,লেবু,কমলা,বড়ই,জলপাই,জাম্বুরা ইত্যাদি হচ্ছে ভিটামিন সি যুক্ত ফল।রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কাজ করে আয়রন।আর শরীরে আয়রন শোষণে কাজ করে ভিটামিন সি।এজন্য শরীরে রক্ত তৈরিতে ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল খাওয়া উচিত।
যেসব খাবারে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি
মাংস
মাংস যে আমাদের রক্ত তৈরিতে কাজে লাগে তা আমরা অনেকে জানি না।শরীরে রক্ত তৈরিতে প্রানিজ প্রোটিন ও আয়রন ব্যাপক ভূমিকা রাখে।গরুর,ছাগল ও মুরগীর মাংস ও কলিজাতে প্রচুর আয়রন ও প্রোটিন বিদ্যমান।রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে মাংস খাওয়া আবশ্যক।
সবুজ শাক-সবজি
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ মাংসের পাশাপাশি সবুজ শাক-সবজি রাখতে হবে।সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন,ভিটামিন বি ও প্রোটিন বিদ্যমান।শরীরে রক্ত তৈরিতে ও রক্তকে দীর্ঘদিন বেঁচে রাখতে সবুজ শাক-সবজি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।সবুজ শাকসবজির মধ্যে পালংশাক ও বাধাকপি অন্যতম।
ফলিক এসিড
ফলিক এসিড বলতে আমরা ভিটামিন বি৯ কে বুঝি।ফলিক এসিড রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।ফলিক এসিড শরীরে রক্ত শূন্যতা হলে তা দূর করে।বাদাম,ডাল,তিলের বীজ,পালংশাক এ প্রচুর পরিমানে ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
ভিটামিন বি জাতীয় খাবার তালিকা
সামুদ্রিক খাবার
সামুদ্রিক খাবার বলতে বুঝায় সমুদ্র হতে তৈরি খাবার।সেটা সামুদ্রিক মাছ ও হতে পারে আবার শৈবাল ও হতে পারে।পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার হচ্ছে সামুদ্রিক খাবার।সামুদ্রিক খাবারে অন্যান্য খনিজ উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়।রক্ত শূন্যতা দূর করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার ও ক্লামস জাতীয় সামুদ্রিক খাবার রাখতে হবে।
ডিম
বহু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার হচ্ছে ডিম।ডিমে আয়রন,প্রোটিন,ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান রয়েছে।শরীরে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে গেলে যে সমস্যা হয় তা দূর করতে আশ্চর্য এক খাবার হতে পারে সিদ্ধ ডিম।শরীরে রক্ত তৈরিতে একটি করে ডিম প্রতিদিন খাওয়া উচিত।
বাদাম
আমাদের দেশে অনেক ধরনের বাদাম পাওয়া যায়।এর মধ্যে পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে কাজুবাদাম ও চিনাবাদাম অন্যতম।কাজুবাদাম ও চিনাবাদাম এ রয়েছে উচ্চ মাত্রায় আয়রন ও ফলিক এসিড।যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে কাজ করে।প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম বাদাম খাওয়া উচিত।
শস্য জাতীয় খাদ্য
সাধারণত চাল,গম,ভূট্টা ও বার্লিকে পূর্ণ শস্য জাতীয় খাবার বলে।এসব খাবার কার্বোহাইড্রেট ও আয়রনে ভরপুর।রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে এসব খাবার ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
সয়াবিন ও ছোলা
সয়াবিন ও ছোলা দিয়ে নানারকম খাদ্য তৈরি করা হয়।সয়াবিন ও ছোলা জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমানে আয়রন পাওয়া যায়।রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে সয়াবিন ও ছোলা দ্বারা তৈরি খাবার খেতে পারেন।
কেউ রক্ত স্বল্পতায় বা রক্ত শূণ্যতায় ভূগলে উপরে দেখানো খাদ্য গুলো গ্রহণ করলে ভালো ফলাফল পাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন