মুখে দুর্গন্ধ কেন হয়? মুখের দুর্গন্ধ সহজেই দূর করার উপায়
মুখের দুর্গন্ধ সমস্যায় অনেকেই ভূগে থাকেন।দিনে-রাতে দুই বার দাঁত ব্রাশ করেও দুর্গন্ধ দূর হয় না।কেউ কেউ তো মুখের দুর্গন্ধের জন্য কথা বলতে ও লজ্জাবোধ করেন।কী কী কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয় ও কী করলে মুখের দুর্গন্ধ সহজেই দূর করা যায় সেই সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত জানব।
মুখ শুকিয়ে যাওয়া
আমাদের মুখের গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিসের নাম হচ্ছে লালা।লালা আমাদের মুখের অনেক উপকার করে থাকে।লালা মুখ ভেজা রাখতে,মুখে আটকে যাওয়া খাদ্য কণাকে সরাতে ও মুখের বিভিন্ন জীবাণুকে সরাতে সাহায্য করে থাকে।এই লালা যখন আমাদের মুখে শুকিয়ে যায় তখন মুখে দুর্গন্ধ হয়।আমরা যখন ঘুমের মধ্যে থাকি তখন মুখের মধ্যে কম লালা আসে ফলে বিভিন্ন জীবাণুকে সরাতে পারে না।যার ফলে আমরা ঘুম থেকে ওঠার পর মুখে দুর্গন্ধ অনুভব করি।
আরও পড়ুন :
চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
মুখে লালার পরিমাণ বাড়াতে যা করবেন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন।পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে দেহের পানি শূন্যতা দূর হবে ও লালার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শশা,গাজর রাখবেন।এগুলো লালার পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করবে।
- লালার পরিমাণ বাড়াতে চুইংগাম ব্যবহার করতে পারেন।অবশ্যই চিনি ছাড়া চুইংগাম ব্যবহার করতে হবে।
- চা,কফি,সফট ড্রিংক পান করবেন না।এগুলো খেলে মুখ শুকিয়ে যেতে পারে।ফলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার
- অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে ৯৯% সম্ভবনা থাকে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার।অস্বাস্থ্যকর খাবার বলতে চিনি যুক্ত চুইংগাম ও কোমলপানীয়।চিনি যুক্ত চুইংগাম খেলে বা চিনিযুক্ত কিছু খেলে কিছু চিনি দাঁতের ফাঁকে আটকে যায় সেগুলো হজম করতে মুখের কিছু ব্যাকটেরিয়া কাজ করে।ফলে সেখানে এসিডের উৎপন্ন হয়।এই এসিড দাঁতের ক্ষত সৃষ্টি করে।আর এই ক্ষত স্থান গুলোতে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু লুকিয়ে থাকার জায়গা পায়।আর এগুলো থেকে মুখে দুর্গন্ধ এর সৃষ্টি হয়।
- আর সুষম খাদ্যের অভাবে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।এজন্য প্রতিদিন শাক্ সবজি ও আঁশযুক্ত ফলমূল খেতে হবে।বাজারে সুলভ মূল্যে পাওয়া মৌসুমি ফলমূল খেতে হবে।
মুখ অপরিষ্কার রাখা
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো মুখ অপরিষ্কার রাখা।মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে মুখের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য কণা আটকে থাকে।যেমন জিহ্বার বিভিন্ন স্থানে,দাঁতের ফাঁকে ও মাড়িতে। আমাদের মুখে থাকা বিভিন্ন জীবাণু এই খাদ্যকণা গুলোকে ভাংতে শুরু করে।এরফলে বিভিন্ন ক্যামিকেলের সৃষ্টি হয়।এই ক্যামিকেল থেকে মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে।
এজন্য প্রতিদিন দুইবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।আপনার টুথপেষ্ট এ অবশ্যই ফ্লরাইট থাকতে হবে।দাঁত ব্রাশ করার সময় অবশ্যই দাঁতের চারপাশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।দাঁতের ভিতর আটকে থাকা খাদ্য কণাগুলোকে সরাতে (ডেন্টাল ফ্লজ) দাঁত পরিস্কারের সুতা ব্যবহার করতে পারেন।
এরপরও মুখে দুর্গন্ধ হলে জিহ্বা ও মুখ পরিস্কার করতে হবে।জিহ্বা পরিস্কার করার জন্য (টাংক ক্লিনার) জিহ্বা পরিস্কারক ব্যবহার করতে পারেন।এটা বাজার কিনতে পারবেন অল্প দামে।
মুখ পরিস্কার করার জন্য (মাউথ ওয়াশ) মুখে নিয়ে কুলি করতে পারেন।দিনে দুইবার করলে হবে।
ধুমপান করা
চা,বিড়ি,কফি ও তামাক জাতীয় খাবার খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়।তামাক ব্যবহার করলে আপনার শ্বাসনালী ও গলার ক্যান্সার হতে পারে।সিগারেট খেলে মুখের দুর্গন্ধসহ ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে অবশ্যই ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
মুখের ভিতরের রোগ
আমাদের মুখের ভিতর আমাদের অজান্তেই অনেক রোগ বাসা করে।অনেক গুলো রোগ আমরা বুঝতে পারি আবার অনেক গুলো বুঝতে পারি না।দাঁতে ক্ষয়,মাড়িতে রোগ,জিহ্বায় রোগ এগুলো মুখে হতে পারে।আমাদের মাড়িতে রোগ হলে ব্যাথা হয় না তাই আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের মাড়িতে রোগ হয়েছে।এই মাড়ি রোগের কারণে একসময় আমাদের দাঁত পর্যন্ত ঝড়ে যেতে পারে।মুখে রোগ থাকলে অবশ্যই ভালো ডেন্টিস এর কাছে চিকিৎসা নিতে হবে।
আশা করি এই দেখানো নিয়ম গুলো মেনে চললে আপনাদের মুখের দুর্গন্ধ চিরতরে দূর হয়ে যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন