এলার্জি দূর করার উপায় |
এলার্জি কী?
আমাদের সকলের শরীরে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।আর এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও কারণে উল্টোভাবে কাজ করলে যে রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাই হচ্ছে এলার্জি।এককথায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সমস্যা হলে এলার্জি বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এলার্জি কেন হয়?
এলার্জি এই রোগ আমাদের কম বেশি সকলেরই দেখা দেয়।এলার্জি কারও ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে আবার কার ক্ষেত্রে সামান্য চুলকানি হতে পারে।কিন্তু এলার্জি কেন হয় আমরা অনেকে এটাই জানিনা।
আমাদের শরীরে প্রতিদিন বাতাসের মাধ্যমে, খাবারের মাধ্যমে আরও নানাভাবে বিভিন্ন রোগ জীবাণু প্রবেশ করে থাকে।কিন্তু আপনি এটা কখনও চিন্তা করছেন যে এতো রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পরও আমরা কেনও অসুস্থ হই না।
এর কারণ হচ্ছে আমাদের শরীরে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। রাজপ্রাসাদ যেমন পাহারা দেয় প্রহরীরা তেমনি আমাদের শরীর পাহাড়া দেয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আর এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সমসময় নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে না যখন উল্টো কোন ও কাজ করে বসে তখনই আমাদের শরীরে এলার্জি হয়ে থাকে।
মনে করেন আপনি ও আপনার পরিবার একসাথে খাবার খেতে বসেছেন,খাদ্য তালিকায় বেগুন ছিলো। সবাই খেলো কারও কিছু হলো না কিন্তু আপনার শরীরে চুলকানি ও চামড়া ফুলে লাল চাকার মতো হয়ে গেলো।
আপনি মনে করেছেন সবাই খেলো কারও কিছু হলো না আমার কেনও সমস্যা হলো। এর কারণ হচ্ছে আপনার শরীরে থাকা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মনে করেছে বেগুন আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই সে বেগুনের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে আপনার শরীরে এলার্জি হচ্ছে।আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর না কিন্তু আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মনে করতেছে এটা ক্ষতিকর।এইরকম খাদ্য থেকেই এলার্জি সৃষ্টি হয়।
অবশ্যই পড়ুন
চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
এলার্জি জাতীয় খাবার
আমরা প্রতিদিন খেয়ে থাকি এইরকম খাদ্যই রয়েছে এলার্জি। এলার্জি জাতীয় খাবার সমূহ-
- গরুর মাংস
- গরুর দুধ
- ডিম
- ইলিশ মাছ
- বেগুন
- তিল
- চিনাবাদাম
- বিভিন্ন বাদাম (পাইন বাদাম,কাঠ বাদাম)
- চিংড়ি মাছ
- শামুক ও কাঁকড়া
চিরতরে এলার্জি দূর করার উপায়
এলার্জি চিকিৎসা করেও নিমূল করা যায় না কিন্তু কিছু নিয়ম কানুন মানলে এর থেকে চিরতরে মুক্তি লাভ করা যায়।
খাবারে এলার্জি
এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা উপরে দেওয়া হয়েছে।যখন দেখবেন খাদ্য খাওয়ার পর শরীরে এলার্জি সমস্যা হচ্ছে তখন বুঝবেন আপনার খাবারে এলার্জি আছে।খাবারে এলার্জি চিহ্নিত করা খুব সহজ।মনে করেন আপনি গরুর মাংস ও শাক দিয়ে ভাত খেয়েছেন।এরপরই আপনার এলার্জি সমস্যা শুরু হয়েছে।এখন কোন খাবারে এলার্জি আছে সেটা আপনাকে বুঝতে হবে।
তারজন্য গরুর মাংস আলাদা ভাবে খেতে হবে।গরুর মাংস আলাদাভাবে খাওয়ার পর যদি দেখেন এলার্জি সমস্যা হচ্ছে তাহলে বুঝবেন গরুর মাংসে আপনার জন্য এলার্জি আছে।এভাবে প্রতিটা খাবারের এলার্জি বের করতে হবে।যেগুলো আপনার জন্য এলার্জি যুক্ত খাবার সেগুলো আপনাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
বাতাসে এলার্জি
আমাদের ঘরের ভিতর অনেক ক্ষুদ্র ধুলিকণা ও আর্জনা থাকে।যদি দেখেন ঘরের তোসব,আসবাপত্র,বিভিন্ন অব্যবহৃত কাগজপত্র পরিস্কার করতে গিয়ে আপনার এলার্জি সমস্যা হচ্ছে তাহলে বুঝবেন আপনার বাতাসের মাধ্যমে এলার্জি রয়েছে।
তাই ঘরবাড়ি ঝাড়ু দেওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে ও ঝাড়ু দেওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে গোসল করতে হবে।এই ধুলিকণা গুলো বাতাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরের সংস্পর্শে এসে এলার্জি সৃষ্টি করে।
ডাস্ট মাইট এলার্জি
আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মৃত কোষ ঝড়ে পড়ে।এগুলো ঝড়ে পড়ে বিছানায়,বালিসের কভারে,আমাদের জামা-কাপড়ে।এই মৃত কোষগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে ডাস্ট মাইট পোকা।এটা এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না।দীর্ঘদিন এর সংস্পর্শে থাকলে এলার্জি হয়ে থাকে।
এর মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার বিছানার কাথা,বালিসের কভার,জামাকাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ঘাম থেকে এলার্জি
আমাদের শরীরের ঘাম থেকে আমাদের এলার্জি হতে পারে।ঘাম থেকে এলার্জি হলে শরীরে যেনও ঘাম কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।এজন্য রোদে কম যাওয়া,অতিরিক্ত ঘাম ঝড়ে এরকম কাজ কম করা,পোশাক ঢিলেঢালা পোড়া।
বছরের বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বাতাসে ভেসে বেড়ানো পরাগ রেণুর ধরণ পাল্টায় সংখ্যা বাড়ে কমে। এর সাথে আপনার এলার্জি তীব্রতা বাড়তে কমতে পারে। বছরের একটা সময় অনেকের চোখ-নাক চুলকানো শুরু করে,নাক দিয়ে পানি পড়ে,মাথা ধরা হয়,হাঁচি-কাশি অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে থাকে।
এইরকম হলে বুঝবেন যে পরাগ রেণু থেকে এই সমস্যা গুলো হচ্ছে। তাই এই সময় উচিত ঘরের ভিতরে থাকা।বাহিরে গেলে ঘরে এসে কাপড়চোপড় ধুয়ে দেওয়া ও গোসল করা।
এলার্জি দুর করার ঘরোয়া ঔষধ
এলার্জি দূর করার জন্য নিমের পাতার বিকল্প নেই।কিছু নিমের পাতা নিয়ে সেগুলো প্রথমে রোদে শুকাতে হবে।তারপর পাতাগুলো বেটে নিয়ে একটা ভালো পাত্রের মধ্যে রাখতে হবে।তারপর সকালবেলা এক গ্লাস পানিতে চা চামচ পরিমাণ নিম পাতা নিয়ে ভিজিয়ে খেতে হবে।রাতের বেলা শোয়ার সময় খেতে হবে।এভাবে টানা একমাস দিনে ২ বার খেতে হবে।তাহলে এলার্জি চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে নিবে।
এলার্জি কমানোর উপায়
মনে করেন আপনার শরীরে এলার্জি হয়ে গেছে এখন আপনি কী করবেন।এলার্জি হলে এলার্জি দূর করার জন্য আন্টি হিস্টামিন ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।যদি দেখেন এলার্জি হওয়ার সম্ভবনা আছে তাহলে অ্যান্টি হিস্টামিন খেয়ে নিবেন তাহলে আর হবে না। এলার্জির চুলকানি কমাতে স্থান গুলোতে বরফের ঠাণ্ডা সেক দিতে পারেন।এছাড়া চুলকানি কমানোর জন্য (ক্যালামাইন লোসন) ব্যবহার করতে পারেন।
যদি চোখে ও নাকে এলার্জি হয় তাহলে এগুলোর জন্য ড্রপ আছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।আপনি যদি মানসিক চাপে থাকেন তাহলে এলার্জি অবস্থা অনেক খারাপ হতে পারে।তাই এলার্জি কমানোর জন্য মানসিক চাপ কমাতে হবে।
প্রাণঘাতী এলার্জি লক্ষণগুলো
এলার্জি ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে আপনার প্রাণ নাশের আশংকা থাকে।প্রাণঘাতী এলার্জি লক্ষণগুলো হলো-
- বুক ধরপড় করা
- মাথা ঘুরা
- হাঁপানি
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম ঝড়া
- শ্বাস নেওয়ার সময় শো শো শব্দ করা
- অজ্ঞান হওয়া
- মুখ,চোখ,জিহ্বা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি
এই প্রাণঘাতি এলার্জি লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন