রোজা রাখার উপকারিতা |
আমরা হাজার হাজার বছর ধরে রোজা রেখে আসলেও আমরা এটা জানি না যে রোজা রাখলে কী কী উপকার হয়।ধর্মীয়রীতি অনুযায়ী আমরা শুধু রোজা রেখে যাই।কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে ও রোজা রাখার উপকারিতা সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না।গত ২-৩ দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞান রোজা নিয়ে গবেষণা করে অনেক বিষ্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে।
রোজা রাখলে কী কী উপকার হয়
আমরা রোজা রাখলে দৈনিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ ঘণ্টাই না খেয়ে থাকি।এসময় আমাদের শরীরে শারীরিক ও মানসিক অনেক উপকার হয়।রোজা রাখলে যেসব উপকার হয় সেটা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।তাহলে চলুন শুরু করি।
রোজা রাখার উপকারিতা
১. পেটের স্বাস্থ্য ভালো হওয়া
আমাদের পেটের মধ্যে নানারকম জীবাণু বসবাস করে থাকে।এগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য উপকারি কিছু জীবাণু রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।রোজা রাখার ফলে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার কারণে ক্ষতিকর জীবাণু গুলো খাদ্য না পেয়ে মারা যায়।তারপর আমাদের পেটে উপকারী জীবাণু জন্ম নেয়।আর যেগুলো খাদ্য হজমে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
২. তারুণ্য ধরে রাখা ও বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি
আমাদের শরীর ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ দ্বারা গঠিত।এগুলো একটা মেশিনের মতো সারাক্ষণ কাজ করতে থাকে।এই প্রক্রিয়া চলার সময় কিছু কোষ ভেঙ্গে যায়,কিছু কোষ ক্ষয় যায়,কিছু কোষ নষ্ট হয়।এই নষ্ট কোষ গুলো সরাতে কোষ নিজেই কাজ করে অটোফেজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষ নষ্ট কোষ গুলোকে বাইরে বের করে শরীরকে সতেজ রাখে।এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চালনা না হলে আমাদের ব্রেইন এর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।আমরা যখন সবসময় খাবারের মধ্যে থাকি তখন এই অটোফেজি প্রক্রিয়া অদিক সময় ধরে বন্ধ হয়ে থাকে।যখন আমরা রোজা রাখি তখন এই অটোফেজি প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
৩. ওজন কমা
আমাদের শরীরের ওজন যখন অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন আমরা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি।তখন আমরা ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম করে থাকি।কিন্তু ব্যায়াম করে কিছুটা ওজন কমলেও কিছুদিন ব্যায়াম না করলে আগের অবস্থা হয়ে যায়।কিন্তু রোজা রাখলে আপনার ওজন কমবেই।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে রোজাদারদের গড়ে ১ থেকে ১.৫ কেজি ওজন কমে।কারও কারও ক্ষেত্রে কম বেশি হতে পারে।দীর্ঘদিন রোজা রাখার ফলে মানুষের নাড়ি ভূরি সংকুচিত হয়ে আসে।এর ফলে রমজান মাস শেষ হওয়ার পরও অল্প খেলেই পেট ভর্তি হয়ে যায় চাইলেও বেশি একটা খাওয়া যায় না।এজন্য রোজা রাখলে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে ওজন কমে যায়।
৪. মেদ ও ভূরি কমে যাওয়া
গাড়ি চালাতে যেমন তেল লাগে তেমনি আমাদের শরীরকে চালাতে ও তেল লাগে।আমাদের শরীরে এই তেল আসে বিভিন্ন খাদ্য থেকে।রোজা রাখার সময় রাতের শেষের দিকে আমরা যে খাদ্য খাই সেই খাদ্যের শক্তি ও তেল ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে ফুরিয়ে যায়।এরপর আমাদের শরীর চালাতে রিজার্ভ তেলের দিকে হাত বাড়াতে হয়।রিজার্ভ তেল হচ্ছে আমাদের শরীরে জমে থাকা চর্বি।রোজা রাখলে শরীরের চর্বি কমে আসে ফলে মেদ ও ভূরি কমে যায়।
৫. স্বাস্থ্য ভালো হওয়া
আমরা সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যাবেলা ইফতার করে থাকি।আমরা ইফতারের সময় অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকি।এদের মধ্যে খেজুর অন্যতম।খেজুরে পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,কার্বোহাইড্রেট ও প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকে।যা আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে।বিভিন্ন রোগবালাই থেকে আমাদেরকে হেফাজত করে।
৬. বদ অভ্যাস দূর হওয়া
আমরা অনেকে ধুমপান, চা ও কফি খেয়ে থাকি।রোজা রাখার ফলে ধুমপান ও চা কফি পানাহার করা থেকে বিরত থাকি।
আমরা অনেকে আছি সামান্য অন্যায় কেউ করলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে থাকি।রোজা রাখার ফলে আল্লাহকে ভয় করে আমরা এসব বদ অভ্যাস থেকে দূরে থাকি।
৭. মানসিক শান্তি
রোজা রাখার ফলে আমাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।রোজা রাখার ফলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।অনেকে মতিষ্কের অনেক রোগে ভোগেন।রোজা রাখার ফলে মতিষ্কের রোগ ভালো হয়ে যায়।আমাদের সবার বড় সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত টেনশন।রোজা রাখার ফলে আমাদের টেনশন দূর হয়।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন রোজা রাখার উপকারিতা সম্পর্কে।পোস্টটি শেয়ার করুন আপনাদের বন্ধুদের মাঝে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন