বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে বেশি ফলমূল আসে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি রসাল ও সুস্বাদু ফল পাওয়া যায়।
গ্রীষ্মকালে আম,জাম,কাঁঠাল,লিচু,পেয়ারা,তরমুজ হয়ে থাকে। এগুলো রান্না করে খেতে হয় না এটা একটা বড় সুবিধা। বয়সভেদে বিভিন্ন নিয়মে ফল খেতে হয়।আজকে আমরা জানব কোন ফলে কী উপকার,কতটা খেলে ক্ষতিকর এবং কী পরিমাণ খেতে হবে।
আম
বাংলাদেশে এপ্রিল মাস থেকেই কাচা আম পাওয়া যায় কিন্তু পাকা আম আসতে সময় লাগে মে মাস পর্যন্ত।স্বাদ,পুষ্টি,গন্ধে জনপ্রিয় একটা ফল হচ্ছে আম। আয়রন ও সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে বেশ কার্যকরী ফল হচ্ছে আম।
আমের উপকারিতা
১. আম রক্তে কোলেস্টেরল এর মতো ক্ষতিকর জীবাণুর মাত্রা কমিয়ে দেয়।
২.ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করে।
৩. শরীরে ক্যান্সার কোষ থাকলে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
৪. আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ প্রোটিন যা রোগ জীবাণু থেকে দেহকে রক্ষা করে।
৫. আমে রয়েছে ভিটামিন-এ যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলে।চোখের চারপাশের শুকনা ভাব দুর করে দেয়।
৬. পাকা আমে শর্করা বেশি থাকায় দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে।
আমের অপকারীতা
১. আম পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। পেট ব্যথা করা,গ্যাস্টিকের সমস্যা হওয়া,ডায়রিয়া হওয়া।
২. ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পাকা আম খাওয়া যাবে না।কারণ পাকা আমে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকে। যা খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। তবে কাঁচা আম খেলে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকার।
৩. স্ট্রোকের রোগীর পাকা আম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর কাঁচা আম খুবই উপকারী।
কাঠাল
বিভিন্ন পুষ্টিবিদের মতে কাঁঠাল বাংলাদেশের গরিবের আমিষ হিসেবেই পরিচিত। স্বাদে স্বাদে ভরপুর এক ফলের নাম হচ্ছে কাঁঠাল। এই ফলটি কাচাতেও খাওয়া যায় আবার পাকলেও খাওয়া যায়।
কাঁঠালের উপকারিতা
১. কাঠালে শর্করা তুলনামূলক বেশি থাকায় এখানে এনার্জি টাও বেশি থাকে। তাই কাঠাল খেলে প্রচুর শক্তি পাওয়া যায় ও আমাদের শরীরকে লম্বা হতে সাহায্য করে।
২. কাঠালের মধ্যে রয়েছে - ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,আয়রন,সোডিয়াম,জিংক ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান।যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে ও বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করে।
কাঠালের অপকারিতা
১. কাঠাল পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।যেমন পেট ফুলে যাওয়া,হজম না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
২. ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পাকা কাঠাল না খাওয়া অনেক ভালো।তবে কাচা কাঠাল খেতে পারবে।
লিচু
লিচু একটি রসাল ও অনেক সুস্বাদু একটি ফল।
লিচুর উপকারিতা
১. লিচু টিউমার রোধে বেশ কার্যকরী। টিউমার রোগীর পর্যাপ্ত পরিমাণে লিচু খাওয়া উচিত।
২. লিচুতে রয়েছে শর্করা,আমিষ,লৌহ,ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি যা আমদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে রক্ষা করে।হাড়কে করে সুস্থ ও সবল।
লিচুর অপকারীতা
১. লিচু পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে বদহজম সহ পেটের নানা সমস্যা হতে পারে।
২. লিচু খালি পেটে অতিরিক্ত খেলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। লিচুতে থাকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যা খালি পেটে খেলে শরীরে শর্করা তৈরিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
জাম
জামের উপকারিতা
১. জাম খেলে শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুদ হয়।
২. ডায়রিয়া ও আলছার রোগ থেকে মুক্ত রাখে।
৩. জাম খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।যারা মনে রাখতে কম পারে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে জাম খাওয়া উচিত।
৪. জাম শরীরের চামরাকে টানটান করতে সাহায্য করে থাকে।
৫. জামের নির্যাস শরীরে ক্যান্সার তৈরির বিভিন্ন কোষকে ধ্বংষ করে।
৬. জাম রুচি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।যাদের রুচি কম তারা জাম খেলে রুচি বেড়ে যাবে।
জামের অপকারীতা
১. অতিরিক্ত পরিমাণে জাম খাওয়া উচিত নয়।অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেটের সমস্যা হবে।
২. আধা পাকা জাম খাওয়া উচিত নয়।খেলে হজমে বিঘ্ন ঘটাবে।
৩. খালি পেটে জাম খাওয়া উচিত নয়।খালি পেটে জাম খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা হতে পারে।
তরমুজ
তরমুজের উপকারিতা
১. তরমুজ এ প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে।যা শরীরের পানি শূন্যতার কাজ করে থাকে।
২. তরমুজ খেলে ফুসফুসে ক্যান্সার,স্থন ক্যান্সার ও ক্লোন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়।
তরমুজের অপকারিতা
১. তরমুজ এ প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে বলে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে।
২. তরমুজ এ অতিরিক্ত পরিমাণে পানি থাকার কাণে কিডনি রোগীরা এই ফল খেতে পারেন না।
পেয়ারা
বাংলাদেশে এখন প্রতিটা মৌসুমে পেয়ারা পাওয়া যায়।বলা যায় পেয়ারা এখন বারোমাসি ফল। কাজি পেয়ারার চেয়ে দেশি পেয়ারা অনেক ভালো ও পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে।প্রায় সকলেই পেয়ারা খেয়ে থাকে।পেয়ারা অতিরিক্ত খেলে কোষ্টকাঠিন্য হতে পারে।
পরিশেষে বলতে পারি প্রতিটি ফল নিয়ম মাফিক খাওয়া উচিৎ। কোনও বড় ধরনের রোগ এ ভুগলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফল খাওয়া উচিৎ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন